Wednesday, June 17, 2015

পর্যবেক্ষণ - ৭


 بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

                        শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়অতি দয়ালু 


একটি জগত আরেকটি জগত সম্পর্কে কিছুই জানে না। আমি খুব সৌভাগ্যবান যে, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তা’আলা আমাকে দুইটি জগতকে পাশাপাশি-কাছাকাছি দেখার সুযোগ করে দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ্‌ J

ক্লিয়ার করি একটু!



আমাদের জেনারেশনের একটা পার্ট তাদের ধর্ম সম্পর্কে কিছুই জানে না বলতে গেলে। বাপ-দাদা হতে প্রাপ্ত রেডিমেইড ইসলাম সম্পর্কে তাদের জ্ঞান স্কুলে শেখা ধর্ম বইয়েই সীমাবদ্ধ। কুর’আন পড়ে আছে সেলফে ধূলিমলিন অবস্থায়। সহীহ ৬টি হাদিসগ্রন্থের একটাও খুঁজলে তাদের বাসায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। ফাইনাল পরীক্ষার পর রেজাল্ট দিবার আগে, কেউ মারা গেলে, নতুন বাসায় উঠলেই কেবল কুর’আনটা ধরা হয় তাদের। আর হাদিস! অনেকেই জানে ‘স্বদেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ’ ‘বিদ্যাঅর্জনের জন্য চীন দেশে হলেও যাও’ এইরকম বহু আল-হাদিসের মোড়কে জালহাদিস। কুর’আনের আয়াত ও হাদিস অনেকেই জানে এই ফেইসবুক থেকে। ধরুন আমি একটা আয়াত পোস্ট দিলাম। অনেকে সেটা দেখে শত শত লাইক দিয়ে গেল। কিন্তু কেউই একটু উদ্যোগী হয়ে কুর’আন খুলে দেখে নিল না, পড়ে নিল না আয়াতটা। আর এভাবেই ‘রেডিও মুন্না’ টাইপ আজাইরা পেইজগুলোর প্রসার পাচ্ছে আমাদের জেনারেশনের মাঝে। তারা ভুলভাল হাদিস তুলে দিচ্ছে। মার্ক টোয়াইনের উক্তি আলী (রাঃ)এর বলে চালিয়ে দিচ্ছে আর আমরা দেদারসে শেয়ার দিয়ে বেড়াচ্ছি!! কাবা শরীফের ছবি দিয়ে বলছে কয়টা লাইক! কয়জন আল্লাহ্‌কে ভালবাসে লাইক দাও! টাইপের ফাজলামো দেখলে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ইসলাম ভালমত না জানা ছেলেমেয়েরা নিজের অজান্তে শিরক করে বসছে ক্ষণে ক্ষণে। কথাবার্তায় সাবধান হচ্ছে না। অনেক কিছুই দেখছি; সব বলা হয়ে উঠে না।

                                              




আরেকটা পার্টের ছেলেমেয়েরা অনেক এগিয়ে গিয়েছে। তারা কুর’আন নিয়ে পড়ছে, হাদিস পড়ছে, ফিকহি আলোচনা করছে। কিভাবে মানুষকে দ্বীনের পথে আনা যায় তার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। একেকজন সেইরকম মেধাবী ছেলেপেলে, নিজেদের মেধাকে আল্লাহ্‌র পথে ব্যয় করছে। হোক না সে ইঞ্জিনিয়ার অথবা ডাক্তার; তার সবচেয়ে বড় পরিচয় সে মুসলিম। এজন্য সে ইসলামের পথ নিজের মূল্যবান সময়টুকু ব্যয় করছে। হিকমাহর অভাবে অনেকেই জড়িয়ে পড়ছে বিতর্কে। উদাহরণস্বরুপ, মাজহাব নিয়ে বিতর্ক। যে ছেলেটা/মেয়েটা ইসলাম নিয়ে কিছু জানে না সে এসব কথা কখনোই বুঝবে না। কারণ সে রেডিমেইড সব কিছু পেয়েছে। আর যার দ্বীনের লাইনে একবার গিয়েছে, মজা পেয়ে গিয়েছে। তারা আরও বেশি বেশি ইলম অর্জনে আত্মনিয়োগ করছে। ঠিক এমনই সময় আরেক জগতে তাদেরই ভাইবোন ইসলাম না জেনে না বুঝে আল্লাহ্‌র কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মিউজিক শুনছে, দেখার অযোগ্য মুভি দেখছে, লাভ বিফোর ম্যারেজে জড়িয়ে পড়ছে {যেটা ক্লিয়ারলি ইসলামে মানা করা হয়েছে, এবং এটা জিনার সমতুল্য}, বিয়ে না করে লিভ টুগেদার করছে, নেশা করছে। নামাজ পড়ছে শুধু জুমু’আতে। বাকি ৭ দিনের ৩৪ ওয়াক্ত নামাজ যে আছে তা ভুলে গিয়েছে। তাদের অন্তরটা সিলগালা করে দিয়েছে শয়তান, তাদের কানে বিষ ঢেলে দিয়েছে শয়তান। পুরোই অন্ধকারে থাকা এই জেনারেশন চরম হতাশ। তাই কদাচিৎ আত্মহত্যার খবর শুনে বিস্মিত হই না আমি!




ইসলাম সম্পর্কে হিউজপরিমাণে জানলেওয়ালা লোকদের আমি চিনি। তাদের ঈমান অনেক শক্ত। প্রতি নিয়ত এই সমাজে চলাফেরা করতে গিয়ে তাদের অনেক বাজে সিচুয়েশানে পড়তে হয়। অনেক এক্সাম দিতে হয়। সেই অনুযায়ী আমাদের লাইফে কিছুই হয় না, এক্সামও দিতে হয় না। আমাদের এলাকার হুজুর এক খুতবায় বলেছিলেন, যার ঈমান যত শক্ত সে তত কঠিন এক্সামের মধ্যে দিয়ে যায়; আর যার অপেক্ষাকৃত কম, সে কম কঠিন এক্সামের মধ্য দিয়ে যায়। আমাদের দেখলে মনে হয় আমরা লাইফটাকে খুব এঞ্জয় করছি। অনেকেরই পোস্ট দেখি ফেইসবুকে, চেকইন দিয়ে বেড়াচ্ছে মুভি দেখছে, গার্লফ্রেন্ডের সাথে ছবি দিচ্ছে, খুব খারাপ লাগছে সো মিউজিক শুনছে। দেখে মনে হচ্ছে, জীবনে যাই চাচ্ছি তাই পাচ্ছি তাই না? এই দুনিয়ায় কয়দিন থাকব আমরা? জানি কি? ধরেন বড়জোর ৬০ বছর। এর পর? একবার চিন্তা করুন, আদম (আঃ) এর সময়ের মানুষদের কথা। কত বছর তারা মাটির নিচে শুয়ে আছে! আমাকে আপনাকেও শুয়ে থাকতে হবে। এই লাইফে যাই চাচ্ছি তাই যখন পেয়ে যাই তখন খুব ভয় লাগে জানেন? মনে হয় আল্লাহ্‌ বোধহয় আমাকে আখিরাতে কিছুই দিবেন না, যা পাবার সব দিয়ে দিয়েছেন। 

                                                  



আমরা যারা ইসলাম নিয়ে জানি না, চিন্তা করি না একটুকুও তারা একটা কথা রাখতে পারবেন? দিনের আধা ঘণ্টা নিজের ধর্মের পিছে সময় দিন। স্টাডি করুন। প্রবেলম ফেইস করলে হেল্প করার ট্রাই করব, ইন শা আল্লাহ্‌। ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে কতক্ষণ লাগে ভাই? প্রতি ওয়াক্ত ১০ মিনিট করে ধরলেও ৫০ মিনিট; এক ঘণ্টার কম। এই একটা ঘণ্টা যদি ইসলামের জন্য কাজে না লাগান, নামায না পড়েন; তাহলে আপনি কিসের মুসলিম? কি জবাব দিবেন হাশরের ময়দানে? আর তো ফিরে আসতে পারবেন না হাজার চাইলেও।     

                                             
     

আপনাদেরই ভাইবোনেরা ইসলাম চর্চা করে আপনাদের চেয়ে এগিয়ে গিয়েছে জান্নাতের পথে। আপনি কি চান না জান্নাতে যেতে? নাকি চান জাহান্নামে অনন্তকাল জ্বলে পুড়ে মরতে।            

সামনে রামাদান আসছে। একটু সচেতন হন ভাইবোনেরা। নামাজটা ধরুন। দেখবেন যত বদ্যাভাস এমনিতেই দূর হয়ে যাবে, ইন শা আল্লাহ্‌। একজন মুসলিম ভাই আপনাদের অনুরোধ করছে রাখবেন না?

ইনশা আল্লাহ্‌। আমি আশায় রইলাম। 


 জাজাকুমুল্লাহু খাইরান।                    

2 comments: