Friday, February 20, 2015

ইলম ৪

 মন ভালো করে দেয়া একটি হাদিস 


                                       بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

                        শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়অতি দয়ালু

আমর ইবনে আবাসা রা. বলেন, জাহেলী যুগে আমি যখন মানুষকে মূর্তিপূজা করতে দেখতাম আমার কাছে মনে হত, নিশ্চয়ই এরা পথভ্রষ্ট। এদের এ সকল কাজ সম্পূর্ণ অসার। হঠাৎ একদিন শুনতে পেলাম, মক্কায় এক ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছে যিনি গায়েবের খবর বলেন। তখন আমি মক্কার উদ্দেশে বের হলাম। মক্কায় পৌঁছে জানলাম, তিনি গোপনে ইসলাম প্রচার করছেন আর কওম তাঁর প্রতি চরম ক্ষিপ্ত হয়ে আছে।

আমি চুপিচুপি তাঁকে খুঁজতে লাগলাম। তিনি মক্কায় ওকাজ নামক স্থানে ছিলেন। আমি সেখানে পৌঁছে তাঁকে সালাম দিলাম। এবং জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনার পরিচয় কী?’ তিনি বললেন, ‘আমি আল্লাহর নবী।’ বললাম, ‘আল্লাহর নবী মানে কী?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর বার্তাবাহক।’ বললাম, ‘কে আপনাকে পাঠিয়েছেন?’ বললেন, ‘আল্লাহ।’ আমি বললাম, ‘সত্যিই কি আপনাকে আল্লাহ পাঠিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ।’ বললাম, ‘(আল্লাহ) আপনাকে কী বার্তা দিয়ে পাঠিয়েছেন?’ তিনি বললেন, ‘আত্মীয়তা রক্ষা করা, মূর্তি (মূর্তি পূজা) ও সকল বাতিল ধর্ম বিলুপ্ত করা, রক্তপাত-হানাহানি বন্ধ করা, মানুষের (জানমাল) চলার পথের নিরাপত্তা বিধান করা, আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা ও তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করা।’ আমি বললাম, ‘আপনার রব কত সুন্দর সুন্দর বিষয় দিয়ে আপনাকে পাঠিয়েছেন!’ আমি আপনাকে সাক্ষী রাখছি, আমি আপনার উপর ঈমান আনলাম এবং আপনাকে সত্য নবী বলে বিশ্বাস করলাম। আর কে কে আপনার এই দ্বীন গ্রহণ করেছে?’ বললেন, ‘একজন আযাদ ও একজন গোলাম (অর্থাৎ আবু বকর রা. ও বেলাল রা.)।’

আমি আরজ করলাম, ‘আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার সাথে থাকতে চাই এবং আপনার অনুসরণ করতে চাই।’ বললেন, ‘এখন তা সম্ভব নয়। দেখছ না, পরিস্থিতি কত প্রতিকূল? আমি গোপনে দাওয়াত দিচ্ছি আর আমার কওম চরম বিরোধিতা করছে। তুমি এখন পরিবারের কাছে ফিরে যাও। যখন শুনবে আমার বিজয় হয়েছে তখন আমার কাছে চলে এসো।’ একথা শুনে আমি আমার পরিবারের কাছে ফিরে এলাম।

আমর ইবনে আবাসা বলতেন, ‘তখন আমি ছিলাম ইসলামের (মুসলমানদের) চারভাগের একভাগ। অর্থাৎ চারজনের একজন।’

এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় হিজরত করলেন। আমি স্বদেশেই অবস্থান করছিলাম ও সব খবরাখবর রাখছিলাম। ইতিমধ্যে একদিন মদীনার একটি কাফেলা এল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘মক্কা থেকে যিনি মদীনায় গিয়েছেন তার খবর কী?’ তারা বলল, ‘মানুষ খুব দ্রুত তাঁর ধর্ম গ্রহণ করছে। তাঁর কওম তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল, পারেনি।’

তখন আমি মদীনায় গেলাম ও রাসূলের সাথে সাক্ষাত করে বললাম, ‘আল্লাহর রাসূল! আপনি কি আমাকে চিনতে পেরেছেন?’ তিনি বললেন, ‘মক্কায় আমার সাথে তোমার সাক্ষাত হয়েছিল।’

আমি বললাম, ‘জ্বি, হাঁ।’ তারপর আরজ করলাম, ‘আল্লাহর রাসূল! আমার অজানা বিষয়, যা আল্লাহ তাআলা আপনাকে শিখিয়েছেন তা থেকে আমাকে কিছু শিক্ষা দিন। আমাকে নামায শেখান।’

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘ফজরের নামায আদায় করবে। তারপর সূর্য পূর্বাকাশে উঁচু হওয়া পর্যন্ত নামায পড়া থেকে বিরত থাকবে। কারণ সূর্য উদিত হয় শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝে। ঐ সময় কাফেররা সূর্যকে সিজদা করে।

‘যখন সূর্য উঁচু হয় তখন নামায পড়বে। কারণ নামায আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। এরপর যখন বর্শার ছায়া সংক্ষিপ্ত হয় (অর্থাৎ সূর্য মধ্য গগণে উঠে আসে) তখন নামায পড়া থেকে বিরত থাকবে। কারণ এ সময় জাহান্নাম উত্তপ্ত করা হয়। এরপর যখন ছায়া দীর্ঘ হতে আরম্ভ করে তখন নামায পড়বে। মনে রাখবে, সকল নামায আল্লাহর দরবারে উপস্থাপন করা হয়।
আসরের নামাযের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত নামায পড়া থেকে বিরত থাকবে। কারণ সূর্য অস্ত যায় শয়তানের দুই শিংয়ের মাঝে। ঐ সময় কাফেররা সূর্যকে সিজদা করে।

আমি আরজ করলাম, ‘আল্লাহর রাসূল! আমাকে অযু শেখান।’

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘যখন তোমার সামনে অযুর পানি আসবে প্রথমে কুলি করবে। তারপর নাকে পানি দিবে ও নাক ঝাড়বে। তখন চেহারার, মুখের ও নাকের গুনাহসমূহ ঝরে পড়বে। এরপর যখন আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক মুখমন্ডল ধৌত করবে তখন পানির সাথে দাড়ির অগ্রভাগ দিয়ে চেহারার গুনাহসমুহ ঝরে পড়বে। এরপর যখন কনুইসহ দুই হাত ধৌত করবে তখন আঙ্গুলের অগ্রভাগ দিয়ে দুই হাতের গুনাহসমুহ ঝরে পড়বে। এরপর যখন মাথা মাসেহ করবে তখন চুলের অগ্রভাগ দিয়ে মাথার গুনাহসমূহ ঝরে পড়বে। এরপর যখন টাখনুসহ দুই পা ধৌত করবে তখন পায়ের আঙ্গুলির অগ্রভাগ দিয়ে পায়ের গুনাহসমূহ ঝরে পড়বে।
এরপর যদি বান্দা নামাযে দাঁড়ায় এবং আল্লাহর শান মোতাবেক হামদ, ছানা ও তাঁর মহত্ব বর্ণনা করে, অন্তরকে সবকিছু থেকে খালি করে একমাত্র আল্লাহমুখী হয়, তাহলে সে নামায শেষ করার পর সদ্যজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে যায়।’

এ হাদীস শুনে সাহাবী আবু উমামা রা. বললেন, ‘হে আমর ইবনে আবাসা! কী বলছেন ভেবে দেখুন। এভাবে একবার নামায পড়লেই বান্দা এই ফযীলত লাভ করবে?

আমর বললেন, ‘আবু উমামা! আমায় বয়স হয়েছে, মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এসেছে। এ অবস্থায় কীসের আশায় আমি আল্লাহর রাসূলের নামে মিথ্যা বলতে যাব? আমি যদি রাসূল থেকে এ কথা একবার দুইবার তিনবার সাতবার না শুনতাম আমি তা বর্ণনা করতাম না। আমি তো এই কথা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে এর চেয়েও বেশিবার শুনেছি।’

তথ্যসূত্র : সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮৩২; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৪৪৭৫; আসসিরাতুয যাহাযিবয়্যাহ ২/৬৮-৬৯

Wednesday, February 11, 2015

পর্যবেক্ষণ - ৩ : কর্পোরেট ফ্রি-মিক্সিং

                                             بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

                        শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়অতি দয়ালু

প্রায় ৫ মাস পর ব্লগে কিছু লিখতে বসলাম। কাজের চাপে লিখালিখির সময় হয়ে উঠে না আর আগের মতন। মাথায় অনেক বিক্ষিপ্ত চিন্তা-ভাবনা ঘুরাফেরা করে। বাস্তব জগত হতে প্রাপ্ত কিছু চিন্তা এতদিন ধরে মজুদ করে আসছি। হঠাৎ ভাবলাম, ছুটি যখন মিলেছে একটু লিখালিখি হয়ে যাক আগের মতন। সে সুবাদে আজকে লিখতে বসা। আজকের লিখার পটভূমি কর্পোরেট দুনিয়ায় নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশাকে ঘিরে আমার চিন্তাভাবনা। অনেকেই অনেক কিছু চিন্তা করে। অনেকে ফাতওয়া দেয় এই বিষয়ে। আমি যেহেতু কোন আলেম নই, কেবল একজন ত্বালিবুল ইলম; সেহেতু আমার দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে চাই কোন ধর্মীয় রেফারেন্স না দিয়ে। বলতে পারেন Neutral Way তে চিন্তন। কাজের কথায় আসি। 

মেয়েরা কর্পোরেট জোনে ছেলেদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করুক এটা আমি চাই না প্রতিদিন কর্পোরেট হাউজে এসবের কদর্যতা দেখছি আমি আমি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে বলব, মেয়েদের ঘরের বাইরে কাজই করা উচিত না কাজ বলতে সেসব প্লেসে যেখানে ফ্রি মিক্সিংএর চান্স আছে

প্রতিদিন দেখি নারী পুরুষের গা ঘেষাঘেষি টাইপের আচরণগুলো। একটা অবিবাহিত ছেলে কেন একটা বিবাহিত মেয়ের চুলের প্রশংসা করে টান দিবে! এটা আমার বুঝে আসেনা। এক্ষেত্রে অনেকেই ঢালাওভাবে ছেলেদের দোষ দিয়ে থাকেন। আমি মনে করি ছেলেটির সাথে সাথে মেয়েটিরও দোষ আছে। কেননা সে কেন প্রশ্রয় দিচ্ছে পরপুরুষকে এত ঘনিষ্ঠ হতে! মেয়েটি লাই দিচ্ছে বলেই তো ছেলেটি মাথায় উঠে নেচে চলেছে। প্রতিদিন দেখি, স্কার্ফিরা (মডারেটরা যাদের হিজাবি বলেন) পুরুষ কলিগদের সাথে হিহি হাহা করে। লাঞ্চ আওয়ারে একসাথে.... কিছু জিনিস চোখে পড়ে, যেসব জিনিস আমার লিখতে বাঁধে, সহজে বলা যায় না সেসব

আলহামদুলিল্লাহ, আমি যে জোনে কর্মরত সেখানে যে 'জন প্রকৌশলী আছেন সবাই ইসলামের হুকুম আহকাম সম্পর্কে অবগত। জামআতে সালাত পড়েন, নারীদের ঘরের বাহিরে ফ্রি মিক্সিং জোনে কাজের ঘোর বিরোধী। ভাইদের স্ত্রীরা সবাইই গৃহিণী। আর আমার জোনে কোন মেয়ে নাই। ফিতনাহ হতে বেঁচে আছি বলতে গেলে, আলহামদুলিল্লাহ

কিন্তু অফিসিয়াল পারপাসে, প্রায়ই অন্য জোনগুলোতে ভিজিটে যেতে হয়। অন্য জোনের প্রকৌশলীদের সাথে ডিরেক্ট ইন্টারেকশনে যেতে হয়। সেক্ষেত্রে বাঁধে বিপত্তি, এটা আমার ক্ষেত্রেই হয় বলে মনে হয়। অনেক কষ্ট করে সে ঘন্টাগুলো পার করে দিই অফিসে। আল্লাহ মাফ করুন আমায়। একেবারে প্রয়োজন ছাড়া কোন কথাই বলি না, যদিও বিপরীত দিক হতে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়াটা অনুভব করি

আমি ফেইসবুকে নারীর ঘরের বাহিরে কাজের ব্যাপারে কিছু লেখা লিখেছিলাম। তা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল অফিসের কিছু 'স্কার্ফি' কলিগদের (ইনারা ফলো করেন)। ইনারা একদিন আক্রমণ করে বসেছিলেন এই বলে, 

'এত পড়াশুনা করেছি কিসের জন্য? প্রেস্টিজের ব্যাপার-স্যাপার। জামাইয়ের টাকায় আমি চলতে পারবো না!'....

তাদের এসব কথা আমায় খুব অবাক করে। আমার আম্মা একজন শিক্ষিত মহিলা। তিনি একজন গৃহিণী, কোন চাকরী-বাকরী না করে আমাদের পিছেই উনার সারাটা সময় ব্যয় করে দিয়েছেন। শুধুমাত্র আমাদের মানুষ করার জন্য। উনি চাকরী করলে বোধহয় কাজের বুয়াদের হাতেই মানুষ হতাম আমরা। আর বর্তমানে ক্যারিয়ার সচেতন মায়েদের বাচ্চাদের বেলায় ঠিক এটাই হচ্ছে। তারা সকাল টু সন্ধ্যা অফিসে সময় কাটাচ্ছেন, পুরুষ কলিগদের সাথে হিহি হাহা করছেন আর তাদের কোমলমতি বাচ্চারা বেবিকেয়ারে/বুয়ার কাছে পড়ে আছে। আমি প্রতিদিন এসবই দেখছি

ঘরের বাহিরে ফ্রি মিক্সিং জোনে নারীদের কাজের ব্যাপারে আমি সচেতন, আলহামদুলিল্লাহ। আম্মাকে দেখেছি। খুব চাই আমার ভবিষ্যৎ স্ত্রীও উনার মত হোক; উনার পথ অনুসরণ করুক। আমি ইনকাম করছি, টাকার যোগান দিচ্ছি সংসারে। আমি থাকতে কেন আমার বউ বাইরে কাজ করবে? এখানে তো প্রেস্টিজের ব্যাপার জড়িত।  চিন্তাটা কেন প্রত্যেক মুসলিম পুরুষের ঘিলুতে ঢুকে না, আমার বুঝে আসে না

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ খৃস্টাব্দ