১.
সোডিয়াম ল্যাম্পপোস্টের নিচে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ আবিস্কার করলাম নিজের অজান্তেই অনেক থিউলজিক্যাল কথাবার্তা মুখ দিয়ে বেরুচ্ছে। এসময় আমার মত অনেকেই জীবনের গতি আগামীদিনে কোন পথে গমন করবে তার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধায় পড়বে এটা স্বাভাবিক। এই দ্বিধা কাটিয়ে উঠতেই হতাশা কাটিয়ে উঠা এক মানুষ আরেক মানুষের প্রতি হাত বাড়িয়ে দেয় আর বলে- লা তাহজান। আর সেই সময় অনেক কিছুর সাথে রিলেইট করতে গিয়ে সুদূরপ্রসারী উচ্চমার্গীয় কথা বলে ওঠা অস্বাভাবিক নয়। দিনশেষে যদি দেখি একটু আগের হতাশ মানুষটি সব হতাশা ফেলে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে, তখনই মনে হয় সব থিউলজিক্যাল কথা সার্থক। মনে তখন স্বর্গীয় ঠাণ্ডা অনুভূতি বিরাজ করে।
সর্বোপরি, আসলেই যতই অন্যকে হতাশা থেকে উদ্ধার করা যাক না কেন, নিজেই কখনো কখনো সব ভুলে হতাশায় পড়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। সময়টা খুব খারাপ। সদুপদেশ দান আর ধৈর্যশীল হতেও চরম পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। এক একটা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দিতে পারে সবকিছু। ছোট হলেও খুব তাৎপর্যপূর্ণ সূরা আল- আসরের তিন আয়াত খুবই প্রাসঙ্গিক এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে।
২.
একটা দৃশ্যের কল্পনা করুন। ধরুন, এক লোক ফ্লাইওভারের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে, একটু পরেই সে লাফ দিবে। লক্ষ্য: আত্মহত্যা।
এই ঘটনা রাস্তা দিয়ে চলমান বাইকে বসা একজন সাংবাদিকের দৃষ্টিগোচর হল। বাইক থামিয়ে তৎক্ষণাৎ সাংবাদিক তার ক্যামেরা বের করে প্রস্তুত হল। এর পর কি ঘটবে? আপনার কি মনে হয়?
১) সাংবাদিক আত্মহত্যারত লোকটিকে থামাবে।
২) সাংবাদিক এই দুর্লভ মুহূর্তটুকু মিস করতে চাইবে না।
যেদেশে ধ্বংসস্তুপে আটকে থাকা মানুষকে লক্ষ্য করে সাংবাদিক বলে উঠে- 'এই মুহূর্তে আপনার অনুভূতি কি?' তাদের কাছ থেকে ২) নং অপশন ব্যতীত অন্য কিছু কল্পনা করা যায় না। কেননা সে যদি লোকটাকে বাঁচায় সে অনেকগুলো চান্স মিস করে। বড় চান্স হল এই ছবি তুলে একটা নিউজ কভার করা, এর উপর "বাংলাদেশে আত্মহত্যা'- শিরোনামে মূল ঘটনার সাথে মিল নেই এমন অপ্রাসঙ্গিক ঘটনার অবতারনা করে একটা স্টোরি করে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া।
তাই সেই দুর্লভ মুহূর্তে একজন সাংবাদিকের কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়- "সবার উপরে ছবি সত্য, তাহার উপরে নাই।" আর একজন মানুষের জীবনকে পরোয়া না করে ঝাঁপিয়ে পড়ে যবনিকাপাত ঘটানো......
কিন্তু সবাই একরকম না। ব্যতিক্রম আছেন। আর তারা আছেন বলেই এই ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থা আজো টিকে আছে, অনেক প্রাণ আজো মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসছে। নতুন করে জীবনের স্বপ্ন দেখছে।
৩.
আচ্ছা ধরুন কেউ যদি আপনার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে তাহলে আপনি কি করবেন?! স্পেসিক্যালি যদি বলি কেউ যদি আমাদের ভালোবাসার মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে কটূক্তি করে তাহলে কি করবেন? সামনাসামনি করলে মানা করতে পারেন। আপনার উচিত হবে না তার ধর্মকে আঘাত হানা। কারণ ইসলাম আপনাকে এটা শিক্ষা দেয় না। কিন্তু যদি দেখেন অনলাইনে কেউ ক্রমাগত এমন করেই যাচ্ছে, আর মানুষের মধ্যে ধর্ম সম্পর্কে উল্টাপাল্টা নিউজ ছড়াচ্ছে। আপনি তাকে চিনেনই না। এক্ষেত্রে আপনার কি করণীয়। ইসলাম কি বলে?
অনেক সময় আপনি এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে সমাজের চোখে হয়ে যেতে পারেন একজন Extremist বা মৌলবাদী, কারণ আপনি সব অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন আর অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার আপনি। ঘুণে ধরা এই সমাজে তারা একেকজন গুরাবা বা আগুন্তক। এদের সংখ্যা সামান্য। কারণ নিকষ কালো আঁধারে খুব অল্পই আলো জ্বলে আছে। তাদের নিভিয়ে দেবার প্রচেষ্টা চলছে, নীলনকশা আঁকা হচ্ছে, প্রতিনিয়ত সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তাদের এই জ্বলে থাকা।
উপরের সমস্যাটার কোন সমাধান আমার জানা নেই। তাই উত্তর দেইনি। আমরা সবাই এক এক মুহূর্তে একেকরকম চিন্তা করব এটা নিয়ে একেকরকম প্রতিক্রিয়া দেখাবো। অনেকেরই কোন ফিলিংস হবে না, অনেকেই কথার তুবড়ি ছোটাবে, কিন্তু বাস্তববাদী হবে না। অনেকে পদক্ষেপ নেবে। অনেকে আজকে প্রথম গুরাবার সাথে পরিচিত হল। অনেকেই গুরাবা সম্পর্কিত হাদিসটা পড়েছেন আমার মতই, তাই শয়নে-স্বপনে লালন করে আমরা সবাই গুরাবা হতে চাই। কিন্তু হতে পারি কয়জন?! প্রশ্ন রইল আপনাদের কাছে।
৪.
দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নানাধরনের কোটা চালু থাকতে দেখা যায়। আমার কাছে এসব নিতান্তই অহেতুক মনে হয়। মাঝেমাঝে কোটার পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ কিছু দাঁড়িয়ে যায় এর পক্ষে এবং বিপক্ষে। এ নিয়ে প্রচুর মিটিং-মিছিল-লেখালিখি-কাঁপাকাঁপি- তর্কাতর্কী হয়। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে আমরা এর প্রমাণ পেয়েছি। অদূর ভবিষ্যতে “শাহবাগ” নামক কোটা চালু হলে অবাক হব না। কেননা সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। হয়তোবা এরও পরিমাণ একদিন বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হবে কোন এক শক্তি। আর তার বিরুদ্ধে মাঠে নামবে আরেক শক্তি। এ সমস্ত সব শুধুই অনুমান। হতেই পারে। কেননা আগেই বলেছি- ‘সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ’।
১৯ ডিসেম্বর, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ
সোডিয়াম ল্যাম্পপোস্টের নিচে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ আবিস্কার করলাম নিজের অজান্তেই অনেক থিউলজিক্যাল কথাবার্তা মুখ দিয়ে বেরুচ্ছে। এসময় আমার মত অনেকেই জীবনের গতি আগামীদিনে কোন পথে গমন করবে তার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধায় পড়বে এটা স্বাভাবিক। এই দ্বিধা কাটিয়ে উঠতেই হতাশা কাটিয়ে উঠা এক মানুষ আরেক মানুষের প্রতি হাত বাড়িয়ে দেয় আর বলে- লা তাহজান। আর সেই সময় অনেক কিছুর সাথে রিলেইট করতে গিয়ে সুদূরপ্রসারী উচ্চমার্গীয় কথা বলে ওঠা অস্বাভাবিক নয়। দিনশেষে যদি দেখি একটু আগের হতাশ মানুষটি সব হতাশা ফেলে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে, তখনই মনে হয় সব থিউলজিক্যাল কথা সার্থক। মনে তখন স্বর্গীয় ঠাণ্ডা অনুভূতি বিরাজ করে।
সর্বোপরি, আসলেই যতই অন্যকে হতাশা থেকে উদ্ধার করা যাক না কেন, নিজেই কখনো কখনো সব ভুলে হতাশায় পড়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। সময়টা খুব খারাপ। সদুপদেশ দান আর ধৈর্যশীল হতেও চরম পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। এক একটা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দিতে পারে সবকিছু। ছোট হলেও খুব তাৎপর্যপূর্ণ সূরা আল- আসরের তিন আয়াত খুবই প্রাসঙ্গিক এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে।
২.
একটা দৃশ্যের কল্পনা করুন। ধরুন, এক লোক ফ্লাইওভারের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে, একটু পরেই সে লাফ দিবে। লক্ষ্য: আত্মহত্যা।
এই ঘটনা রাস্তা দিয়ে চলমান বাইকে বসা একজন সাংবাদিকের দৃষ্টিগোচর হল। বাইক থামিয়ে তৎক্ষণাৎ সাংবাদিক তার ক্যামেরা বের করে প্রস্তুত হল। এর পর কি ঘটবে? আপনার কি মনে হয়?
১) সাংবাদিক আত্মহত্যারত লোকটিকে থামাবে।
২) সাংবাদিক এই দুর্লভ মুহূর্তটুকু মিস করতে চাইবে না।
যেদেশে ধ্বংসস্তুপে আটকে থাকা মানুষকে লক্ষ্য করে সাংবাদিক বলে উঠে- 'এই মুহূর্তে আপনার অনুভূতি কি?' তাদের কাছ থেকে ২) নং অপশন ব্যতীত অন্য কিছু কল্পনা করা যায় না। কেননা সে যদি লোকটাকে বাঁচায় সে অনেকগুলো চান্স মিস করে। বড় চান্স হল এই ছবি তুলে একটা নিউজ কভার করা, এর উপর "বাংলাদেশে আত্মহত্যা'- শিরোনামে মূল ঘটনার সাথে মিল নেই এমন অপ্রাসঙ্গিক ঘটনার অবতারনা করে একটা স্টোরি করে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া।
তাই সেই দুর্লভ মুহূর্তে একজন সাংবাদিকের কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়- "সবার উপরে ছবি সত্য, তাহার উপরে নাই।" আর একজন মানুষের জীবনকে পরোয়া না করে ঝাঁপিয়ে পড়ে যবনিকাপাত ঘটানো......
কিন্তু সবাই একরকম না। ব্যতিক্রম আছেন। আর তারা আছেন বলেই এই ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থা আজো টিকে আছে, অনেক প্রাণ আজো মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসছে। নতুন করে জীবনের স্বপ্ন দেখছে।
৩.
আচ্ছা ধরুন কেউ যদি আপনার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে তাহলে আপনি কি করবেন?! স্পেসিক্যালি যদি বলি কেউ যদি আমাদের ভালোবাসার মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে কটূক্তি করে তাহলে কি করবেন? সামনাসামনি করলে মানা করতে পারেন। আপনার উচিত হবে না তার ধর্মকে আঘাত হানা। কারণ ইসলাম আপনাকে এটা শিক্ষা দেয় না। কিন্তু যদি দেখেন অনলাইনে কেউ ক্রমাগত এমন করেই যাচ্ছে, আর মানুষের মধ্যে ধর্ম সম্পর্কে উল্টাপাল্টা নিউজ ছড়াচ্ছে। আপনি তাকে চিনেনই না। এক্ষেত্রে আপনার কি করণীয়। ইসলাম কি বলে?
অনেক সময় আপনি এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে সমাজের চোখে হয়ে যেতে পারেন একজন Extremist বা মৌলবাদী, কারণ আপনি সব অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন আর অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার আপনি। ঘুণে ধরা এই সমাজে তারা একেকজন গুরাবা বা আগুন্তক। এদের সংখ্যা সামান্য। কারণ নিকষ কালো আঁধারে খুব অল্পই আলো জ্বলে আছে। তাদের নিভিয়ে দেবার প্রচেষ্টা চলছে, নীলনকশা আঁকা হচ্ছে, প্রতিনিয়ত সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তাদের এই জ্বলে থাকা।
উপরের সমস্যাটার কোন সমাধান আমার জানা নেই। তাই উত্তর দেইনি। আমরা সবাই এক এক মুহূর্তে একেকরকম চিন্তা করব এটা নিয়ে একেকরকম প্রতিক্রিয়া দেখাবো। অনেকেরই কোন ফিলিংস হবে না, অনেকেই কথার তুবড়ি ছোটাবে, কিন্তু বাস্তববাদী হবে না। অনেকে পদক্ষেপ নেবে। অনেকে আজকে প্রথম গুরাবার সাথে পরিচিত হল। অনেকেই গুরাবা সম্পর্কিত হাদিসটা পড়েছেন আমার মতই, তাই শয়নে-স্বপনে লালন করে আমরা সবাই গুরাবা হতে চাই। কিন্তু হতে পারি কয়জন?! প্রশ্ন রইল আপনাদের কাছে।
৪.
দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নানাধরনের কোটা চালু থাকতে দেখা যায়। আমার কাছে এসব নিতান্তই অহেতুক মনে হয়। মাঝেমাঝে কোটার পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ কিছু দাঁড়িয়ে যায় এর পক্ষে এবং বিপক্ষে। এ নিয়ে প্রচুর মিটিং-মিছিল-লেখালিখি-কাঁপাকাঁপি- তর্কাতর্কী হয়। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে আমরা এর প্রমাণ পেয়েছি। অদূর ভবিষ্যতে “শাহবাগ” নামক কোটা চালু হলে অবাক হব না। কেননা সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। হয়তোবা এরও পরিমাণ একদিন বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হবে কোন এক শক্তি। আর তার বিরুদ্ধে মাঠে নামবে আরেক শক্তি। এ সমস্ত সব শুধুই অনুমান। হতেই পারে। কেননা আগেই বলেছি- ‘সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ’।
১৯ ডিসেম্বর, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ
No comments:
Post a Comment