Monday, December 30, 2013

ইলম ২.০

                                                         
                                                           بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

                                 শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। 


প্রথম প্রথম যখন লেখাপড়া শুরু করি, তখন বিভিন্ন বিষয়ে আমার খটকা লেগেইছিল। তার একটি হল তাকদির। বিষয়টা হল, আমি অতিরিক্ত গভীরভাবে চিন্তা করতে গিয়ে সিম্পল একটা ব্যাপার লেজেগোবরে করে ফেলতাম। আলহামদুলিল্লাহ্‌, এখন তাকদিরের কনসেপ্ট আমার ক্লিয়ার। ক্লিয়ারের জন্য অনেক বই পড়েছি। সিনিয়র, ব্যাচমেট বন্ধুরা সাহায্য করেছে ব্যাপারটা সিম্পলি চিন্তা করতে।

আরেকটা যে জিনিস ছিল তা হল এমন- আমি প্রায়ই ভাবতাম আল্লাহ্‌ তো সবই জানেন আমার ভাগ্যে কি আছে, সব লেখা আছে। তাহলে শুধু শুধু এখানে এলাম কেন?!  আল্লাহ্‌ তো জানেনই আমি জান্নাতে যাব নাকি জাহান্নামে যাব। তাহলে কেন পৃথিবীতে এলাম? দুই জায়গার যেকোনো জায়গায় তো যেতে পারতাম। আমার চিরচারিত অভ্যেস- গভীর ভাবে চিন্তা করা। লেগে গেলাম এটা নিয়ে। বই পড়তে থাকলাম। আবছা আবছা উত্তর মিলে। কিন্তু আমার চাই যুক্তিসঙ্গত উত্তর, যা পড়ে আমি শান্তি পাব। আশা করি এধরনের প্রশ্ন আমার মত অনেকেরই মাথায় এসেছে। উত্তর আমার মিলেছে।

চলুন এ নিয়ে কিছুক্ষন আলোচনা করা যাক। এবিষয়ে লিখতে গিয়ে আমি সাহায্য নিয়েছি- ডঃ আবু আমিনাহ বিলাল ফিলিপস রচিত "স্রষ্টা ধর্ম জীবন" বইটির।

মহান আল্লাহ্‌ তা'আলা সুবিচারক ও ন্যায়পরায়ণ। শেষ বিচারের দিন তাঁর অজস্র গুনের মত এই গুণগুলো প্রতিভাত হবে। আল্লাহ্‌ চাইলেই কিন্তু আমাদেরকে সৃষ্টির পরেই তাঁর অসীম জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে জান্নাত কিংবা জাহান্নামে পাঠিয়ে দিতে পারতেন, পৃথিবীতে না পাঠিয়েই। কারণ আল্লাহ্‌ তো একটা মানুষকে সৃষ্টির আগে থেকেই জানতেন- সে জীবনে কি কি সিদ্ধান্ত নিবে।

যারা জান্নাতে যাবার যোগ্য শুরুতেই তাদেরকে আল্লাহ্‌ জান্নাতে পাঠিয়ে দিতেন। তারা আরাম-আয়েশে সেখানে জীবন-যাপন করত। তারা আল্লাহ্‌র এমন সিদ্ধান্তে কোনরূপ প্রশ্নই তুলত না বরঞ্চ জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ্‌র প্রতি কৃতজ্ঞ থাকত।

অপরদিকে, যারা সরাসরি জাহান্নামে যেত, তারা অবশ্য এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলত। পৃথিবীতে পাঠানো হলে তারা কি করত সেটা না জানার কারনে তারা তর্ক জুড়ে দিত, মনে হতো যে তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে, সেই সাথে বলত যে পৃথিবীতে জীবনযাপনের সুযোগ দিলে তারা ইসলামের প্রতি বিশ্বাস করত আর ভালো কাজ করত।

আর এসব কারনেই আল্লাহ্‌ আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এবং আমরা যে সিদ্ধান্তগুলো নিতাম সেগুলো নেবার সুযোগ করে দিয়েছেন। এর ফলে যারা যারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে তারা পরবর্তীতে বুঝবে যে তারা তাদের কাজের ফলেই সেখানে গিয়েছে। তারাই জাহান্নামকে আবাসস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে। তখন তারা নিজের জীবনে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহসমুহকে উপলব্ধি করতে পারবে, তারা যে দুনিয়ায় আল্লাহ্‌র অজস্র নেয়ামতের মধ্যে ডুবে থেকেও সেসব অস্বীকার করেছে, পাপকর্ম করেছে সেসমস্ত স্বীকার করতে বাধ্য হবে। ফলে সর্বশেষে আল্লাহ্‌র বিচারকে ত্রুটিহীন এবং ন্যায়নিষ্ঠ বলে স্বীকার করে নিবে। তবে এরপরেও তারা আরেকটিবারের জন্য পৃথিবীতে ফিরে এসে ভালো কাজ করার জন্য সুযোগ প্রার্থনা করবে।

আল্লাহ্‌ সুবহানাল্লাহ্‌ তা'আলা কুর'আনে বলেছেন-

যদি আপনি দেখতেন যখন অপরাধীরা তাদের পালনকর্তার সামনে নতশির হয়ে বলবে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম। এখন আমাদেরকে পাঠিয়ে দিন, আমরা সৎকর্ম করব। আমরা দৃঢ়বিশ্বাসী হয়ে গেছি। (সূরা আস-সাজদা, আয়াত ১২)  

কিন্তু ব্যাপারটা হল, যে জাহান্নামে শাস্তি পেয়েছে আল্লাহ্‌ যদি তা ভুলিয়ে আবার তাকে পৃথিবীতে ফেরত পাঠাতেন, তাহলে তারা আবার খারাপ কাজ করে আবারও জাহান্নামের জন্যই উপযুক্ত হত। এই বিষয়ে আল্লাহ্‌ তা'আলা বলেছেন-

এবং তারা ইতি পূর্বে যা গোপন করত, তা তাদের সামনে প্রকাশ হয়ে পড়েছে। যদি তারা পুনঃ প্রেরিত হয়, তবুও তাই করবে, যা তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল। নিশ্চয় তারা মিথ্যাবাদী। (সূরা আল-আন'আম, আয়াত ২৮) 

বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী যাই বলুন না কেন- এই যে আমাদের সবাইকেই এই সুন্দর পৃথিবীতে আল্লাহ্‌র অজস্র নেয়ামতের মধ্যে বসবাসের সুযোগ দেয়া হয়েছে- আমরা কি বুঝি না আল্লাহ্‌ তা'আলা আমাদেরকে কত ভালোবাসেন। যারা দুনিয়ায় মন্দকে বাদ দিয়ে ভালোকে বেছে নিবে তাদের জন্য আল্লাহ্‌ তা'আলা জান্নাত সৃষ্টি করেছেন। এই নিদর্শনের মাঝেই আল্লাহ্‌র ভালোবাসা উদ্ভাসিত হয়।

তবে যারা সত্য সত্যই তাদের পাপকর্মের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে করজোড়ে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চায়, তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়ার আগ্রহের মাঝেই যেন আল্লাহ্‌র ভালোবাসা বিশেষভাবে প্রকাশ পায়। আমাদের পাপ মোচনের জন্য তাওবার দরজা খুলে রাখা হয়েছে। গুনাহ যতই বড় হোক না কেন, পৃথিবীর শেষ দিন পর্যন্ত আল্লাহ্‌র কাছে তাওবা করার সুযোগ মিলবে।






আল্লাহ্‌ তা'আলা নবী কারীম (সাঃ)-কে বিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে এই কথাগুলো বলার নির্দেশ দিয়েছেন-

বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এবং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু। (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত ৩১) 

আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ্‌র রাসুল (সাঃ) বলেছেন-

'সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌ বলেছেন, "হে আদমসন্তান, তুমি যতক্ষন পর্যন্ত আমাকে ডাকবে এবং আমার কাছে চাইবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমাকে তোমার কৃতকর্মের জন্য মাফ করে দিতে থাকব এবং আমি কোন কিছুর পরোয়া করি না। হে আদমসন্তান, তোমার পাপ যদি আকাশ ছুঁয়ে ফেলে আর তারপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, আমি তোমাকে মাফ করে দিব। হে আদমসন্তান, তুমি যদি আমার সাথে কাউকে শরিক না করে পৃথিবী-ভরা পাপ নিয়েও আমার কাছে আসো তবে আমিও তেমন বিশাল ক্ষমাশীলতা নিয়ে তোমার সাথে সাক্ষাত করব।''' (সহীহ সুনান আত-তিরমিজি, নম্বর ২৮০৫)         

আমার কিছু বন্ধুদের জীবনে প্রায়শই হতাশাঘেরা কথাবার্তা বলতে শুনেছি। তারা অনেক পাপকর্ম করে ফেলেছে। হা-হুতাশ করছে এনিয়ে। আল্লাহ্‌ কি তাদের মাফ করবেন। উপরের হাদিস থেকে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, এক শিরক ছাড়া আল্লাহ্‌ তা'আলা সব কিছু ক্ষমা করে দিবেন। বান্দা যদি আকাশ পরিমাণ পাপকর্মও করে তাহলেও।

প্রকৃতঅর্থে আমরা অনেকেই কুর'আন আর হাদিস থেকে ইলম অর্জন করি না। আল্লাহ্‌ তা'আলা যে কি পরিমাণ নেয়ামত আমাদের চারপাশে দিয়ে রেখেছেন তা আমরা কিকরে বুঝব যদি আমরা কুর'আন, হাদিস না পড়ি। এজন্যই চারপাশ থেকে হতাশাব্যাঞ্জক "আমি কি মাফ পাব?!" কথাগুলো শুনতে হয়।

এজন্যই যারা পড়ে না, যারা চিন্তা করে না আমার মনে হয় তারা অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হয়। দুনিয়া দুইদিনের। সবাই দুনিয়াবি ইলম অর্জনে ব্যস্ত, কেউই দ্বীনী ইলমের ধার ধারে না। তাদের জন্যই আমার এসব লেখা। এসব পড়ে যেন তারা উদ্বুদ্ধ হয়- কুর'আন-হাদিসে কি যে কি পরিমান ইলম আছে সেটা তাদের বুঝানো। এজন্যই এতসব লিখালিখি। আমার উদ্দেশ্য এটাই যে, নিজে ইলম অর্জন করব , আর সেই ইলমের উপর ভিত্তি করে লেখা লিখব সহজ ভাষায়, যাতে করে বিষয়টা সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। আর মানুষ বেশি বেশি করে আল্লাহ্‌র পথে, এই ইসলামের পথে ফিরে আসে, ইলম অর্জন করে।

মহান আল্লাহ্‌ তা'আলা সবার আশা-আকাঙ্খা পূরণ করুন। সবাইকে সৎ- সঠিক পথে চলার জন্য তৌফিক দান করুন। আমিন।


জাজাকআল্লাহ্‌ খাইরান।



ফেইসবুক নোটস লিঙ্ক 

৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ



Thursday, December 19, 2013

উপলব্ধি ৫

১.

 সোডিয়াম ল্যাম্পপোস্টের নিচে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ আবিস্কার করলাম নিজের অজান্তেই অনেক থিউলজিক্যাল কথাবার্তা মুখ দিয়ে বেরুচ্ছে। এসময় আমার মত অনেকেই জীবনের গতি আগামীদিনে কোন পথে গমন করবে তার সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধায় পড়বে এটা স্বাভাবিক। এই দ্বিধা কাটিয়ে উঠতেই হতাশা কাটিয়ে উঠা এক মানুষ আরেক মানুষের প্রতি হাত বাড়িয়ে দেয় আর বলে- লা তাহজান। আর সেই সময় অনেক কিছুর সাথে রিলেইট করতে গিয়ে সুদূরপ্রসারী উচ্চমার্গীয় কথা বলে ওঠা অস্বাভাবিক নয়। দিনশেষে যদি দেখি একটু আগের হতাশ মানুষটি সব হতাশা ফেলে নতুন দিনের স্বপ্ন দেখছে, তখনই মনে হয় সব থিউলজিক্যাল কথা সার্থক। মনে তখন স্বর্গীয় ঠাণ্ডা অনুভূতি বিরাজ করে। 

 সর্বোপরি, আসলেই যতই অন্যকে হতাশা থেকে উদ্ধার করা যাক না কেন, নিজেই কখনো কখনো সব ভুলে হতাশায় পড়ে যাওয়া খুব স্বাভাবিক। সময়টা খুব খারাপ। সদুপদেশ দান আর ধৈর্যশীল হতেও চরম পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। এক একটা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দিতে পারে সবকিছু। ছোট হলেও খুব তাৎপর্যপূর্ণ সূরা আল- আসরের তিন আয়াত খুবই প্রাসঙ্গিক এই সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে।



২. 


 একটা দৃশ্যের কল্পনা করুন। ধরুন, এক লোক ফ্লাইওভারের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে, একটু পরেই সে লাফ দিবে। লক্ষ্য: আত্মহত্যা। 


 এই ঘটনা রাস্তা দিয়ে চলমান বাইকে বসা একজন সাংবাদিকের দৃষ্টিগোচর হল। বাইক থামিয়ে তৎক্ষণাৎ সাংবাদিক তার ক্যামেরা বের করে প্রস্তুত হল। এর পর কি ঘটবে? আপনার কি মনে হয়?

১) সাংবাদিক আত্মহত্যারত লোকটিকে থামাবে। 

২) সাংবাদিক এই দুর্লভ মুহূর্তটুকু মিস করতে চাইবে না। 

 যেদেশে ধ্বংসস্তুপে আটকে থাকা মানুষকে লক্ষ্য করে সাংবাদিক বলে উঠে- 'এই মুহূর্তে আপনার অনুভূতি কি?' তাদের কাছ থেকে ২) নং অপশন ব্যতীত অন্য কিছু কল্পনা করা যায় না। কেননা সে যদি লোকটাকে বাঁচায় সে অনেকগুলো চান্স মিস করে। বড় চান্স হল এই ছবি তুলে একটা নিউজ কভার করা, এর উপর "বাংলাদেশে আত্মহত্যা'- শিরোনামে মূল ঘটনার সাথে মিল নেই এমন অপ্রাসঙ্গিক ঘটনার অবতারনা করে একটা স্টোরি করে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া।

 তাই সেই দুর্লভ মুহূর্তে একজন সাংবাদিকের কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়- "সবার উপরে ছবি সত্য, তাহার উপরে নাই।" আর একজন মানুষের জীবনকে পরোয়া না করে ঝাঁপিয়ে পড়ে যবনিকাপাত ঘটানো......

 কিন্তু সবাই একরকম না। ব্যতিক্রম আছেন। আর তারা আছেন বলেই এই ঘুণে ধরা সমাজব্যবস্থা আজো টিকে আছে, অনেক প্রাণ আজো মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসছে। নতুন করে জীবনের স্বপ্ন দেখছে। 



৩. 


 আচ্ছা ধরুন কেউ যদি আপনার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে তাহলে আপনি কি করবেন?! স্পেসিক্যালি যদি বলি কেউ যদি আমাদের ভালোবাসার মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে কটূক্তি করে তাহলে কি করবেন? সামনাসামনি করলে মানা করতে পারেন। আপনার উচিত হবে না তার ধর্মকে আঘাত হানা। কারণ ইসলাম আপনাকে এটা শিক্ষা দেয় না। কিন্তু যদি দেখেন অনলাইনে কেউ ক্রমাগত এমন করেই যাচ্ছে, আর মানুষের মধ্যে ধর্ম সম্পর্কে উল্টাপাল্টা নিউজ ছড়াচ্ছে। আপনি তাকে চিনেনই না। এক্ষেত্রে আপনার কি করণীয়। ইসলাম কি বলে?

 অনেক সময় আপনি এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে সমাজের চোখে হয়ে যেতে পারেন একজন Extremist বা মৌলবাদী, কারণ
আপনি সব অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন আর অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার আপনি। ঘুণে ধরা এই সমাজে তারা একেকজন গুরাবা বা আগুন্তক। এদের সংখ্যা সামান্য। কারণ নিকষ কালো আঁধারে খুব অল্পই আলো জ্বলে আছে। তাদের নিভিয়ে দেবার প্রচেষ্টা চলছে, নীলনকশা আঁকা হচ্ছে, প্রতিনিয়ত সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তাদের এই জ্বলে থাকা।

 উপরের সমস্যাটার কোন সমাধান আমার জানা নেই। তাই উত্তর দেইনি। আমরা সবাই এক এক মুহূর্তে একেকরকম চিন্তা করব এটা নিয়ে একেকরকম প্রতিক্রিয়া দেখাবো। অনেকেরই কোন ফিলিংস হবে না, অনেকেই কথার তুবড়ি ছোটাবে, কিন্তু বাস্তববাদী হবে না। অনেকে পদক্ষেপ নেবে। অনেকে আজকে প্রথম গুরাবার সাথে পরিচিত হল। অনেকেই গুরাবা সম্পর্কিত হাদিসটা পড়েছেন আমার মতই, তাই শয়নে-স্বপনে লালন করে আমরা সবাই গুরাবা হতে চাই। কিন্তু হতে পারি কয়জন?! প্রশ্ন রইল আপনাদের কাছে।



৪. 

 দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নানাধরনের কোটা চালু থাকতে দেখা যায়। আমার কাছে এসব নিতান্তই অহেতুক মনে হয়। মাঝেমাঝে কোটার পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ কিছু দাঁড়িয়ে যায় এর পক্ষে এবং বিপক্ষে। এ নিয়ে প্রচুর মিটিং-মিছিল-লেখালিখি-কাঁপাকাঁপি- তর্কাতর্কী হয়। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে আমরা এর প্রমাণ পেয়েছি। অদূর ভবিষ্যতে “শাহবাগ” নামক কোটা চালু হলে অবাক হব না। কেননা সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ। হয়তোবা এরও পরিমাণ একদিন বৃদ্ধিতে সচেষ্ট হবে কোন এক শক্তি। আর তার বিরুদ্ধে মাঠে নামবে আরেক শক্তি। এ সমস্ত সব শুধুই অনুমান। হতেই পারে। কেননা আগেই বলেছি- ‘সব সম্ভবের দেশ বাংলাদেশ’



১৯ ডিসেম্বর, ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ 

Sunday, December 8, 2013

ইলম ১.০

                                                                
                                                              بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

                                 শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। 


আমরা সবাই মুসলিম। মানেই হল আমরা কালিমায়ে শাহাদাত স্বীকার করে নিয়েছি, ঠিক? নাকি জানিই না কালিমা কি অথবা কয়টা কালিমা আছে! জানা দরকার কি বলেন? কালিমায়ে শাহাদাত হল- 

আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইলাল্লাহু ওয়াহদাহু লা সারিকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু 

অর্থ :  আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তাঁর কোন অংশীদার নেই।আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ(সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। 

 উকবাহ ইবন আমের বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ সুন্দর করে অযু করার পর কালিমায়ে শাহাদাত পাঠ করে তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজাই উন্মুক্ত করে দেয়া হবে, সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করবে। [মুসলিম]

এই কালিমায় শাহাদাত স্বীকার করলেই হবে না এর তাৎপর্যগত ইলমও অর্জন করতে হবে, মেনে চলতে হবে। শুধু মুখে আল্লাহ্‌ আমার প্রতিপালক, মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহ্‌র প্রেরিত রাসুল বললেই হবে না। জানতে হবে খুঁটিনাটি। মানতে হবে সব অক্ষরে অক্ষরে। 

তো ইলমের একটা পার্ট ছিল মুহাব্বাহ। ইশক আর মুহাব্বাতের মধ্যে পার্থক্য বুঝছিলাম। ইশক আর মুহাব্বাত (মুহাব্বাহ (adj) root হুব্ব) এর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারার পর এক ছোট ভাই তার নিজের নাম নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেল। নাম আশিকুর রহমান। বিচ্ছেদ করলে দাঁড়ায় রহমানের আশিক। আশিক শব্দটা ইশক থেকে আগত। ইশক জেনেরালি ইউজ হয় সেক্সচুয়াল রিলেশানশিপের ক্ষেত্রে, মানবীয় প্রেমের ক্ষেত্রে। আল্লাহর সাথে যে আমাদের একটা আত্মিক বন্ধন সেটা ইশক দিয়ে ডিফাইন করা যায় না। আল্লাহ্‌র সাথে যে আত্মিক বন্ধনটা সেটা হল মুহাব্বাহ/মুহাব্বাত। তদ্রুপ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথেও আমাদের মুহাব্বাহ। সুতরাং পরে যেটা চিন্তা করলাম নামে কিছু যায় আসে না, তার মাঝে যদি প্রকৃত বুঝ আর ইলমটা থাকে তাহলে সেটাই আসল। নাম তো বড় কিছু না, সে কি করছে সেটাই বড় ব্যাপার। 

আর আমি যদি এখানে অনেককে এই প্রশ্ন করি যে- এই পৃথিবীতে আপনি কাকে বেশি ভালোবাসেন? অনেকেই ফেইল মারবেন। অনেকে না। সহীহ বুখারিতে এমন একটি হাদিস পড়েছিলাম। উমার (রাঃ)কে রাসুলুল্লাহ ঠিক এই কোয়েসচেনটাই করেছিলেন। কত নং হাদিস মনে পড়ছে না, তাই উল্লেখ করলাম না। সেখানে উমার (রাঃ) বলেছিলেন- তিনি নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। পরে রাসুলুল্লাহর প্রত্যুত্তরে তিনি নিজেকে শুধরে নিয়ে বলেন-সেই মুহূর্ত থেকে তিনি নিজের চেয়ে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বেশি ভালোবাসেন এবং তাঁর জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে পারেন। তো আল্লাহর পরে এই দুনিয়ায় রাসুলুল্লাহ (সাঃ)কে মুহাব্বাত করা আমাদের জন্য অবশ্যই কর্তব্য। আর তাহলেই আমাদের কালিমায়ে শাহাদাত মেনে নেওয়াটা সার্থক হবে। 

এই সম্পর্কিত ইলম অর্জনের পথে আছি। মুহাব্বাহ ছাড়াও আরও ৯টি গুরুত্বপূর্ণ পার্ট আছে। থিসিসের কাজে ব্যস্ত বিধায় সময় হয়ে উঠছে না। এসব নিয়ে একদিন বিস্তারিত লিখার আশায় আছি ইনশা আল্লাহ্‌।

(চলবে)  

Monday, December 2, 2013

নবীজির( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবনী পর্ব -০২ | আরবের প্রেক্ষাপট

আলহামদুলিল্লাহ্‌। অবশেষে অবমুক্ত হল নবীজির( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)জীবনী পর্ব -০২ | আরবের প্রেক্ষাপট। 

 সীরাত শোনা, এসব নিয়ে আলোচনা করা কোন সময় নষ্ট নয়। এটা একটা ইবাদাহ। যে ইবাদাহের মাধ্যমে আমরা রাসুল (সাঃ) এর জীবনকে জানতে পারব। তা জানার মাধ্যমে আমরা তাঁকে অনুসরণ করতে পারব। সেই অনুসরনের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ তা'আলার হুকুম আহকাম পালন করতে পারব। এবং আল্লাহ্‌ তা'আলার প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। যে আলোচনার মাধ্যমে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় তাকে ইবাদাত বলতে হচ্ছে। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সীরাত না জানলে, না বুঝলে কুর'আনের হুকুম-আহকাম গুলো বুঝা কঠিন হয়ে যাবে। তাঁর সীরাত জেনে নিজের জীবনকে গড়ে তুলি তাঁর মতন। এটা মুসলিম হিসেবে আমাদের সবার কর্তব্য। 

এই পর্বে যা থাকছেঃ

১. ইব্রাহীম (আ), হাজেরা (আ) এবং ইসমাইল (আ) এর ইতিহাস।

২. যমযম কূপের ইতিহাস।

৩. যুরহুম গোত্রের এবং হাজেরা (আঃ) ইতিহাস।

৪. খুজাআ ও কুরাইশ গোত্রের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

৫. রসুলুল্লাহ (সা) বংশ ধারার ইতিহাস। ৫.১ কুরাইশদের দ্বারা মক্কায় রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা ৫.২ হাশিম এর ইতিহাস এবং কেন তাকে হাশিম নামে ডাকা হতো। ৫.৩ শাইবা (আব্দুল মুত্তালিব) এর ইতিহাস এবং কেন তাকে আব্দুল মুত্তালিব বলা হতো। ৫.৪ রসুলুল্লাহ্ (সা:) এর নবুয়তের প্রমান অনুধাবন করা।

৬. আব্দুল মুত্তালিব এর সাথে সংঘটিত দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ৬.১ যমযম এর পুনরুদ্ধার (৩০০+ বছর পর) ৬.২ তার ছেলে আব্দুল্লার বদলে ১০০ টি উটের কুরবানি।


    



বাংলা ভাষায় সর্ব প্রথম অডিও-ভিজ্যুয়াল ফরম্যাটে নির্মিত সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তিত্ব মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনীর উপর ধারাবাহিক লেকচার সিরিজ। সবাইকে সিরিজের ২য় পর্ব শোনার আমন্ত্রন রইল। 


[বি.দ্র.: যারা এখনো ১ম পর্ব শুনেন নাই, তাদের জন্য সেই ভিডিওর লিঙ্ক দেয়া হল] 


বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুনঃ www.bandareza.com এবং 

চোখ রাখুন ফেইজবুক পেইজে www.facebook.com/bandareza313




জাজাকআল্লাহ্‌ খাইরান।