بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু
কবে থেকে চালু হয় ইসলামিক মুদ্রা? কেই বা প্রবর্তক?
পণ্যবিনিময় ব্যবস্থার আদিমতম মাধ্যম হিসেবে অর্থের লেনদেন সেই পুরাকাল থেকেই চলে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির মধ্যেও এর কোনো বিকল্প ছিল না। মুসলিমরা ব্যবসা-বাণিজ্যে অন্যদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়েই উন্নতি করেছিল সেই সময়। সেই সময়কার মুসলিম সাম্রাজ্যগুলির লেনদেন নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন এখনও অনেকের কাছে অজানা।
মুহাম্মদ (সা:)-এর সময় বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য ও পারস্য সাম্রাজ্যের শাসনব্যবস্থা ও জীবন ধারণের সাথে আরবের দেশগুলির সমাজ ব্যবস্থায় পার্থক্য ছিল। ওই সাম্রাজ্যগুলি চলত সম্রাটের অধীনে এবং সম্রাট শেষ কথা বলতেন। কিন্তু আরবে ছিল উপজাতি ব্যবস্থা, উপজাতিদের মধ্যেই একরকম গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতা নির্বাচিত হতেন।
আরবের সওদাগররা পণ্য নিয়ে সারিসারি উটে চাপিয়ে যেত ব্যবসা করতে। এই পণ্যের মধ্যে থাকত ধূপধুনো, আতর, মশলা, হাতির দাঁত, মুক্তো ইত্যাদি। এর মধ্যে বেশ কিছু জিনিস ছিল যেমন ধুনো বা গন্ধরস, এগুলি শুধু আরবেই পাওয়া যেত সেইসময়। তাই এর চাহিদাও ছিল প্রচুর।
যেহেতু এই ব্যবসাদাররা বিনিময়প্রথায় ব্যবসা করতেন তাই লেনদেনের জন্য অর্থ বা প্রচলিত মুদ্রার প্রয়োজন তখনও পরেনি। এর ব্যবহার শুরু হয় ইসলাম ধর্মের প্রচারের সাথে সাথে কারণ ইসলাম তৎকালীন বিভিন্ন সমাজের মধ্যে ভীষণভাবে ছড়িয়ে পরে। এই সমাজগুলোর মধ্যে ইসলাম নিজের জায়গা বানিয়ে নেয় আবার কিছু জায়গায় বেশ কিছু পুরাতন নিয়মও থেকে যায়। এর মধ্যেই একটা ছিলো মুদ্রার ব্যবহার। বাইজেন্টাইনরা সোডিয়াস নামক স্বর্ণমুদ্রার ব্যবহার করত।
সেই সময় পারস্যে সাম্রাজ্যে প্রচলিত ছিল দ্রাখমার ব্যবহার যা খ্রীষ্টধর্মের প্রতিক বহন করত। পরে খলিফা উঠমান এই মুদ্রাগুলির সংস্কার করেন সেই সময় থেকেই ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম’ শব্দটি যোগ করেন। যদিও এতে এমন কিছু পরিবর্তন হয়নি, আসল ইসলামিক মুদ্রার ব্যবহার চালু হয় ৬৯৬-৯৭ খ্রীস্টাব্দে। এই সময় পঞ্চম উম্মায়দ খলিফা আব্দ আল মালিক ইবনে মারওয়ান বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন। এই সময় মুদ্রা থেকে অইসলামীয় সমস্ত চিত্র ও নকসা সরিয়ে দিয়ে সমস্ত কিছু ইসলামীকরণ করেন। স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রার ওজনও নির্ধারণ করেন তিনি এবং নাম পরিবর্তন করেন মুদ্রার। স্বর্ণমুদ্রার নামকরণ করেন দিনার, এবং রৌপ্যমুদ্রার নাম হয় দিরহাম। এই মুদ্রাগুলি ইসলামের প্রচারক বা চিহ্ন হিসাবে কাজ করত। মুদ্রার একপ্রান্তে ছিল শাহাদাহর প্রথম অংশ, যা প্রধান পরিচায়ক হিসেবে কাজ করত। অন্য প্রান্তে খোদিত ছিল, সুরা আল তওবাহ, আয়াত ৩৩। আয়াতটিতে বলা হয় -
“মুহাম্মদ (সা:), আল্লাহের দূত। আল্লাহ তাঁকে প্রতিনিধি হিসাবে পাঠিয়েছিলেন এই সত্য ও শান্তির ধর্মকে প্রচার করতে।”এই মুদ্রাগুলিই একই রকম ভাবে চলে আগামী একহাজার বছর। কোনোরকম নকসার বা ওজনের পরিবর্তন ছাড়াই চলে এগুলো।
এই ইসলামীয় মুদ্রার অদ্বিতীয় গঠন ও অসামান্য মূল্য সমস্ত মুদ্রাকে ছাড়িয়ে যায়। এই মুদ্রার মধ্যে দিয়েই ইসালাম জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। মুসলমান ব্যবসায়ীরা গর্ববোধ করত এই মুদ্রার ব্যবহার নিয়ে কারণ তাদের ব্যবসায় এই মুদ্রার পৃথিবীজোড়া নাম ছিল। এই মুদ্রাগুলি এখনও দেখা পাওয়া যায় বিভিন্ন মিউজিয়ামে। সেই শতসহস্র বছরের গরিমায় মুদ্রাগুলি এখনও নিজ মহিমায় দীপ্ত।
No comments:
Post a Comment