Friday, October 11, 2019

ইলম - ৯

 بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ

শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু 


কখন ক্ষমা প্রার্থনা করবেন আল্লাহর কাছে?

রাতের প্রশান্ত মুহূর্তকে মনোবিজ্ঞানীরা দিনের বিশেষ মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত করেন। এ সময়ই মানুষ তার অন্তরের আবেগ অনুভূতিকে অন্যের কাছে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করে। রাতে মানুষের মনের এ উন্মুক্ত অবস্থাকে কাজে লাগানোর সুযোগ গ্রহণে ইসলামে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

যে ব্যক্তির লক্ষ্য আখেরাতের সফলতা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, সে ব্যক্তি তার রাতকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কাজেই ব্যস্ত রাখবে।

হাদীসের বর্ণনায় এসেছে, রাতের শেষ এক-তৃতীয়াংশে আল্লাহ পৃথিবীর মানুষের কাছে আহ্বান জানান তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার এবং তাদের চাহিদা সম্পর্কে জানানোর। যা পূরণের জন্য আল্লাহ নিশ্চিত ওয়াদা দেন।


রাতের বিশেষ এ মুহূর্তকে আল্লাহর সাথে কাটান। তার কাছে নিজেদের গুনাহের ক্ষমা প্রার্থনা করুন এবং যাবতীয় চাহিদা প্রকাশ করুন। এর মাধ্যমে আপনি আল্লাহর সাথে এমন দৃঢ় সম্পর্কে যুক্ত হবেন যে, দুনিয়ার কোনো বিষয়ই আপনাকে হীনমন্য ও হতাশ করবেনা।


রাতে আমরা তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে এ সুযোগকে কাজে লাগাতে পারি। একটু চেষ্টা করে ফজরের দশ মিনিট আগে উঠে দুই রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দিন। আপনি নিজেই আপনার পরিবর্তন অনুভব করবেন।

রমজান ইবাদতের মৌসুম। রমজানে সাহরির সুবাদে তাহাজ্জুদ পড়া খুবই সহজ। সাহরির সময়ই তাহাজ্জুদের সময়। তাই রমজানে তাহাজ্জুদের অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে। যেহেতু সাহরি খাওয়ার জন্য ছোট-বড় প্রায় সবাই ঘুম থেকে ওঠেন, তাই সবাইকে তাহাজ্জুদ পড়তে উৎসাহিত করা যায়। তাহাজ্জুদ নামাজ নবীজি (সা.) নিয়মিত পড়তেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় নবী (সা.)-কে উদ্দেশ করে বলেন: 

‘এবং রাত্রির কিছু অংশ তাহাজ্জুদ কায়েম করবে, ইহা তোমার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, তোমার প্রতিপালক তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবেন প্রশংসিত স্থানে (মাকামে মাহমুদে)।’ 
(আল-কোরআন, পারা: ১৫, সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ৭৯)

তাহাজ্জুদ নামাজ সুন্নত; অতিরিক্ত হিসেবে একে নফলও বলা হয়। এর রাকাত সংখ্যা আট, বারো থেকে বিশ পর্যন্ত উল্লেখ পাওয়া যায়। চার রাকাত বা দুই রাকাত পড়লেও তা তাহাজ্জুদ হিসেবে পরিগণিত হবে। এই নামাজকে ‘সালাতুল লাইল’ বা ‘কিয়ামুল লাইল’ নামাজও বলা হয়।

তাহাজ্জুদ নামাজের আগে-পরে কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করা খুবই উপকারী। এ সময় সুরা মুজাম্মিল, সুরা মুদ্দাচ্ছির, সুরা মুলক, সুরা ওয়াকিআহ, সুরা দুখান, সুরা আর রহমান, সুরা ইয়াসিন, সুরা হাশর ও সুরা কাহাফ এবং অন্যান্য সুরা তিলাওয়াত করা অত্যন্ত বরকতময় ও ফলদায়ক। এটি দোয়া কবুলের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। প্রতি রাতে এ সময় আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং বান্দার ফরিয়াদ শোনেন।

মধ্যরাতের পরে বা রাতের দুই-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হলে তাহাজ্জুদ নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। রাত দুইটার পর থেকে ফজরের নামাজের ওয়াক্ত আরম্ভ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত। সাহরির সময় শেষ হলে তথা ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলে তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত শেষ হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জমানায় তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য আলাদা আজান দেওয়া হতো। এখনো মক্কা শরিফে ও মদিনা শরিফে এই নিয়ম চালু আছে। তাহাজ্জুদের আজানের পরেও (ফজরের আজানের আগ পর্যন্ত) সাহরি খাওয়া যায়। তাহাজ্জুদ নামাজ একা পড়াই উত্তম।

তাহাজ্জুদের নামাজ নবী (সা.)-এর জন্য অতিরিক্ত ফরজ হিসেবে নির্দিষ্ট ছিল। আমাদের তাহাজ্জুদের নামাজ ফরজ নয়, বরং সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অবশ্য এই নামাজ নেককার ও আল্লাহভীরুদের বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, 

‘নিশ্চয়ই রাতে ঘুম থেকে ওঠা মনকে দমিত করার জন্য অধিক কার্যকর। ওই সময়ে পাঠ করা (কোরআন তেলাওয়াত বা জিকির) একেবারে যথার্থ।’ 

(সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৬)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, 

‘আর আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’ 
(সুরা ফুরকান, আয়াত : ৬৪)

শেষ রাতে মানুষ যখন গভীর ঘুমে মগ্ন থাকে, তখন তাহাজ্জুদ আদায়কারীরা আল্লাহর ভালোবাসায় নিদ্রা ত্যাগ করে জেগে ওঠে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, 

‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায়। আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ 
(সুরা সাজদা, আয়াত : ১৬)

শুধু নামাজ আদায় নয়, রাতের শেষ ভাগে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা খাঁটি ঈমানদারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ঈমানদারদের গুণাবলি সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে, 

‘তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত ব্যয়কারী ও রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থী।’ 
(সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৭)

No comments:

Post a Comment