بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু
দ্বীন শিক্ষায় সতর্কতা । পর্ব - ১ এর পর ..............
জ্ঞানের
স্বল্পতার কারণে ইবলীস জাহান্নামে যাবে না। ইবলীস জাহান্নামে যাবে আল্লাহর প্রতি
ভয় না-থাকার কারণে। সাংঘাতিক এই পীড়ার কারণে মৃত্যুর চেয়েও ভয়ংকর পরিণতি থেকে তার
জ্ঞান তাকে বাঁচাতে পারবে না। যারা হাতে গোনা কিছু বই পড়েছে, অমুক-তমুক কলেজ থেকে
গ্রাজুয়েট হয়েছে কিন্তু তারবিয়্যার শিক্ষা পায়নি, তাদের
পরিণতিও একই। তাদের মধ্যে আল্লাহভীতির চরম ঘাটতি আছে। তাদের কামনা-ইচ্ছা
বাস্তবায়নের জন্য তারা জ্ঞানের অপব্যবহার করে ইসলামিক বিধিবিধানের ফাঁকফোকর খোঁজে।
তারা তাওয়ীলাত (ব্যাখ্যা ও ওজর) তৈরি করে। এবং তাদের বক্তব্যের সমর্থনে—খালি চোখেই
যেটার ভুল ধরা পড়ে—কুরআন-হাদীস ব্যবহার করে। তারা যে নিজারেই তাদের জাহান্নামের পথ
সুগম করছে সে ব্যাপারে যেন একেবারেই বেখেয়াল। তাদের এই জ্ঞান তাদের জীবিকা অর্জনের
একটা উপায়; আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার নয়।
একজন
প্রকৃত ‘আলিম একটি বাতির মতো। ঘরে কেউ আছে কি না সেটা নিয়ে তিনি মাথা ঘামান না।
আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার কারণেই তিনি ঘরটা আলোকিত করেন; কারণ এটাই যে তার স্বভাব!
স্বাভাবিকভাবেই যারা তাঁর আশেপাশে থাকেন, তারা তাঁর
জ্ঞানের আলোয় নিজেদের উদ্ভাসিত করেন। যদিও সেই ‘আলিম ব্যক্তিগতভাবে এগুলো নিয়ে
মোটেই চিন্তিত নন; বাতি কি কখনো জিজ্ঞেস করে, ‘কেউ কি আমার দিকে তাকিয়ে আছে?’ বাতির শিখা একা
একাই জ্বলজ্বল করে জ্বলে ওঠে। এটাই তার প্রকৃতি। জ্বলে ওঠা ছাড়া আর কী করার আছে
তার! আর এটাই ‘উলামা-উল-হাক়—প্রকৃত বিদ্বানদের বৈশিষ্ট্য। জ্ঞানের মাঝেই তাঁরা
গড়ে তোলেন তাঁদের বসতি, কেননা তাদের মনে শুধু একটিই
অভিলাষ: আল্লাহর সন্তুষ্টি।
প্রখ্যাত
‘আলিম শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলাওয়ির ছেলে শাহ আব্দুল-আযিয দেহলাওয়ি একবার দিল্লির এক
জামিয়া মাসজিদে লেকচার দিচ্ছিলেন। এটা এশিয়ার অন্যতম বড় মাসজিদ। হাজারো লোক এসেছিল
তাঁর বক্তৃতা শুনতে। মাইকের মাধ্যমে জনারণ্যের শেষ মাথা পর্যন্ত তাঁর কথা শোনা
যাচ্ছিল। দেড় ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্য রাখেন তিনি। বক্তৃতা শেষ করে তিনি তার চেম্বারে
বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এমন সময় এক লোক এসে বলল, “হাযরাত, দিল্লি থেকে
বহু দূরের অমুক গ্রাম থেকে শুধু আপনার কথা শোনার জন্যই এসেছিলাম। আমি যতটা
ভেবেছিলাম তার চেয়েও অনেক বেশি সময় লেগে গেছে আসতে। অনেক কষ্ট হয়েছে। কিন্তু এসে
দেখি আপনার লেকচার শেষ। খুব খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে আমার সব কষ্ট বিফলে গেল। আমি
এখন কী করব?”
শাহ আব্দুল-আযিয
তাকে বললেন, “আপনি
বসুন। আমি আবার বলছি।“ তিনি উঠে দাঁড়ালেন। যে-উদ্যম ও নিষ্ঠা নিয়ে তিনি হাজারো
লোকের সামনে বক্তব্য রেখেছিলেন, সেই একই উদ্যম ও নিষ্ঠা
নিয়ে তিনি গ্রামের সেই লোকটির সামনে বক্তৃতা দিলেন। লোকটি তাঁর বক্তৃতা শুনে খুব
মুগ্ধ হলেন। শাহ আব্দুল-আযিযকে অসংখ্য ধন্যবাদ দিয়ে তাঁর জন্য অনেক দু‘আ করে
বিদায় নিলেন তিনি।
শাহ আব্দুল-আযিযের
ছাত্ররা এই ঘটনা দেখে তো বিস্ময়ে হতবাক। ছাত্রদের একজন জিজ্ঞেস করল, “শায়খ, খুবই আশ্চর্যজনক একটা ঘটনা দেখলাম আজকে। হাজারো লোকের সামনে আপনি
যেভাবে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, গ্রামের এই লোকটির সামনে আপনি
সেই একইভাবে বক্তৃতা দিলেন। লোকটি এমন এক গ্রাম থেকে এসেছিল যে গ্রামের নাম আমরা
কখনো শুনিইনি, কিন্তু আপনি যেভাবে বক্তৃতা দিলেন, যে দরদমাখা কণ্ঠে, সমান নিষ্ঠা ও উদ্দীপনার
সাথে বক্তৃতা দিলেন সেটা এক কথায় অভাবনীয়। কীভাবে সম্ভব এটা?”
শাহ আব্দুল
আযিয বললেন, “এতে
আশ্চর্য হওয়ার কী আছে? হাজার হাজার লোকের সামনে যখন আমি
কথা বলছিলাম তখন আমি যেমন শুধু একজনকে সন্তুষ্ট করার জন্যই কথা বলেছি, এখনো আমি যখন একজন লোকের সামনে বক্তৃতা দিয়েছি আমার উদ্দেশ্য ছিল শুধু
তাঁকেই খুশি করা।”
আল্লাহ
যেন উনার উপর এবং সব উলামা-উল-হাক়-এর উপর সন্তুষ্ট হন।
তারবিয়্যার
ফল এটাই। শাহ আব্দুল আযিয তাঁর বাবার কাছ থেকে সঠিক তারবিয়্যার শিক্ষা নিতে
পেরেছিলেন। আল্লাহ তাঁদের সবার উপর সন্তুষ্ট হোক।
যারা এই
লেখাটি পড়ছেন, তারা
যা জানেন সেটা যদি চর্চা করে থাকেন, তাহলে আমার মনে হয়
জান্নাতে যাওয়ার জন্য যতটুকু জানা প্রয়োজন, সম্ভবত তারা
ইতিমধ্যেই তা জেনে নিয়েছেন। তারপরও ‘জ্ঞান অন্বেষণ’-এর নামে আমরা এখানে সেখানে
ঘুরে বেড়াই, অথচ ইতিমধ্যেই যা জেনেছি সেগুলো চর্চা করার
ব্যাপারে খুব একটা পাত্তা দেই না। কে কতটুকু জানে তার ভিত্তিতে কেউ জান্নাতে যাবে
না। মানুষ জান্নাতে যাবে সে কী করেছে তার ভিত্তিতে।
তাই কার
কাছ থেকে দীন শিখছেন সে ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকুন। অনেক কিছু জেনে আল্লাহর বিধানকে
অমান্য করার চেয়ে অল্প জেনে সেটা পালন করাই অনেক বেশি ভালো। বেশি জেনে আল্লাহর
অবাধ্যতা করার মতো কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন।
আল্লাহ
ছাড়া আর কাউকে ভয় পাবেন না। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করুন। দেখবেন, আল্লাহই আপনাকে রক্ষা করছেন।
মূল লেখা: মীর্জা ইয়াওয়ার বেইগ
(সমাপ্ত)
No comments:
Post a Comment