Tuesday, August 27, 2013

উপলব্ধি-২

একটা মানুষ জন্ম নেয়ার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সে শুধু ছুটে বেড়ায়। কেউ টাকার পিছে, কেউ আরামের পিছে, কেউ অসম্ভব জ্ঞানের সন্ধানে। ছুটছে তো ছুটছে। একটা প্রশ্ন আমার মাথায় খুব ঘুরত, এখনো ঘুরে। আসলে সবই ধান্ধা ছাড়া আর কিছুই না। তবে এক একজন এক এক ধান্ধার পিছে ছুটছে প্রতিনিয়তই। এই যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছি আমরা। পড়ছি তো পড়ছি। ব্রেনে জ্ঞান একেরপর এক ঢুকিয়েই যাচ্ছি। অনেকে উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাবো। কেউ কেউ চাকুরিতে ঢুকবে। বিয়ে করবে। বাচ্চা-কাচ্চা পালবে। এদেরকে বড় করবে। বুড়ো হবে। একদিন ফুঁস করে চলে যাবে। তো কি লাভ হল আমার এই জ্ঞান অর্জনের?!

আমার এক নিকটতম বন্ধু বলেছিল-  
যতই তুই বেশি জানতে চাইবি, ততই জ্ঞানের জানালা একেরপর এক তোর সামনে খুলতেই থাকবে, শেষ হবে না কখনো। কি লাভ খুলে বল, থাক না বন্ধ।

মানুষের অজানাকে জানার স্পৃহা বহুদিনের। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। কিন্তু কেন যেন মনে হয় মানুষ কোন একটি চক্রে আবদ্ধ। এমনটিই ঘটছে কিন্তু। আমার সমমনা বন্ধুরা আমাকে প্রায়ই বলত- এসবের লাভ-লোকসান বুঝিয়ে। ধর্মের দিক দিয়ে বুঝাতে চাইত যে-

দেখ তুই যদি আমল না করিস, তোর এত এত লেখাপড়া দিয়ে কিছুই হবে না। আসলে সব কিছুই ভ্যাল্যুলেস- দুনিয়াবী জ্ঞান।

কিন্তু পাল্টা আমি যখন প্রশ্ন করতাম-

তুই এখানে কেন? তোর তো আমার সাথে তাহলে থাকার কথা না। আমি দুনিয়াবী জ্ঞানে দীক্ষিত হচ্ছি কিন্তু তুই কেন। তোকে তাকদির মেনে নিতে হবে, বন্ধু। ইট ওয়াজ রিটেন, দেটস হোয়াই উই আ হিয়া। 

আর কোন কথাই মুখ দিয়ে বের হত না। বুঝে গেছে যে কেন এখানে কবি নীরব।  

দুনিয়াবী জ্ঞান আর অন্য জ্ঞান যাই হোক না কেন? লোকজনের মেইন সমস্যা- তারা খুব কমই প্রয়োগ করে যায় দুনিয়াতে নিজেদের অর্জিত জ্ঞান। এখন আমার অনেক বন্ধুই বলবে-

সবই মোহ, এ ছাড়া কিছুই নয়।

আমি বলি- মাই ব্রাদার, তোমার চিন্তা আর আমার চিন্তার এখানেই তফাৎ। আমি বিশ্বাস করি- সেই জ্ঞানে যে জ্ঞান আমি প্রয়োগ করতে পারব। সেই জ্ঞানের আমার কোন দরকার নাই যে আমি সারাটা জীবন ইনপুট দিয়া গেলাম। কলুর বলদের মত চাকরি করলাম। একদিন চলেও গেলাম পৃথিবী ছেড়ে। সময়গুলা পুরাই নষ্ট।  
                                                        


আল্লাহ্‌র অশেষ রহমতে কিছুদিন পরেই আমি ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে যাচ্ছি। এখনো আমার জ্ঞান অন্বেষণের অনেক কিছুই বাকি বলতে গেলে। আমি জ্ঞানের পিছে ছোটা একজন মানুষ, যে কিনা মৃত্যুর আগে তার জ্ঞানের প্রয়োগ দেখে যেতে চায়। আমার ফিল্ডে সেটা খুবই সম্ভব। ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছি, অনেকের ভুল ধারনা এরা খালি ঘুষই খায়!! ভালোও কিছুও করা যায় মানুষের জন্য এই জায়গা থেকে। ধরুন, আমার উচ্চশিক্ষা যদি হয় নবায়নযোগ্য শক্তির উপর, তাহলে সে ক্ষেত্রে আমার জাতিকে সাধ্যমত সাহায্য করব। এভাবে অন্যান্য প্রকৌশলী ভাইয়েরাও নিজ নিজ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসবেন বলে আশায় রাখি। আশায় আছি ইনশাআল্লাহ্‌ আমার সমমনা কয়েকজন ভাইকে আমার পাশে পেয়ে যাবো। 

এক পি.এইচ.ডি পড়ুয়া বড় ভাই বলছিলেন- যখন মানুষ বেশি জ্ঞানী হয়ে যায়, তখন দুই ধরনের ঘটনা ঘটে। হয় সে আল্লাহ্‌ভীরু হয়ে যায়, না হয় সে পুরো ছারখার হয়ে অস্তিত্ব অস্বীকার করা শুরু করে। 

এত কিছুর পরেও আমাদের একটা জিনিস বাদ গেলে চলবে না কিন্তু। জ্ঞান অন্বেষণ করছেন, ভালো কথা। প্রতিনিয়ত আল্লাহকে স্মরুন করুন। বিপদে তাঁর কাছে সাহায্য চান। ধৈর্যধারন করুন। আপনাকে কে এমন অমিত প্রতিভার অধিকারী বানিয়েছেন তাঁর কথা মনে রাখুন। নিশ্চয়ই অভীষ্ট লক্ষ্যের পথে আল্লাহ্‌ আপনার সাথে থাকবেন। ইনশাআল্লাহ্‌।  


[একান্তই ব্যক্তিগত অভিমত]

No comments:

Post a Comment