পূর্বকথাঃ
লিখাটা আমার সকল অনুজদের জন্য। অনুরোধ করছি তোমাদের একটু চিন্তা করে দেখার জন্য।
চার বছর আগে যখন আমি এই বিদ্যেপিঠে পা রেখেছিলুম, স্পষ্ট মনে আছে অরিয়েন্টেশনের দিন তৎকালীন শ্রদ্ধেয় কমান্ডেন্ট স্যার ক্যাম্পাসে ছাত্র-ছাত্রীদের একত্রে ঘুরাঘুরি, গাছতলায় আড্ডা মারা- নানাবিধ কার্যকলাপের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। ক্যাম্পাসের সেই প্রথম নিট এন্ড ক্লিন দিনগুলির কথা খুব মনে পড়ে। আফসোস হয়। আমি যখন এসেছিলাম, কদাচিৎ দু’একটা ডিপার্টমেন্টে জোড়া দেখেছিলাম। তখন এসব রেয়ার কেইস ছিল। আমরা এসে যাদের ফাইনাল ইয়ার পেয়েছিলাম তাদেরই মধ্যে একজন ভাই আমাকে সেদিন বললেন-
“ক্যাম্পাসটা ‘জিয়াউদ্যান’ হয়ে গেছে। তোমরা ফাইনাল ইয়ার, কিছু কর।”
আমি জানি না আমার এখানে কি করার আছে? আমি বড়জোর সচেতনতামূলক একটা স্ট্যাটাস দিতে পারব। সবার কাছে গিয়ে গিয়ে তো নিষেধ করতে পারি না যে- ‘এ-ই এসব করো না’।
ছোটদেরই উচিত বড়দের কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া। সবার উপর পরিবার থেকে শিক্ষা- এরকম একটা ব্যাপার আছে। গতকাল শ্রদ্ধেয় বড় ভাই+শিক্ষক অভিযোগ করলেন- রাস্তায়-পথে কোন স্যার সামনে দিয়ে গেলেও তাদের হুঁশ থাকে না, তারা তাদের কাজ চালায় যায়। একটু সালাম তো দেওয়া যায়, এমন অবস্থায় দেখেও না দেখার ভান করা সত্যি দুঃখজনক।
আমি একে নৈতিক অবক্ষয় বলব কিনা সেটা বুঝতে পারছি না। হয়তোবা আমাকে কেউ বলতেও পারে- আমি এসবে জড়িত নই বলে বুঝি না ব্যাপারগুলো। অথবা কেন জ্ঞান দিচ্ছি হঠাৎ! আসলে দেখতে খারাপ লাগে, মানে দৃষ্টিকটু লাগে। দিন দিন সেটা চক্রবৃদ্ধিহারে আশংকাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। বড়ই দুঃখের ব্যাপার। এবং সাম্প্রতিককালে এসব একটু বেশীই চোখে পড়ছে।
অভিজ্ঞতা থেকে বলছি- অনেকেই এসব হুজুগেই করে। প্রথম প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নিজেকে মুক্ত-স্বাধীন-বাধনহাঁরা ভাবতে থাকে একটি ছেলে বা মেয়ে। আশেপাশে দেখে অথবা অন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের দেখে অথবা হোস্টেলের রুমমেটদের পূর্ব থেকে চলে আসা সম্পর্ক দেখে অনেকে একাকীত্বে ভুগে অথবা বন্ধুরা খোঁটা দিতে থাকে তার কেউ নেই এই বলে। তাই উঠে পড়ে লাগে ‘একজন’ খুঁজাতে- যে চারটা বছর তার পিছে সময় দিবে। পেলে তো ভালোই হল- যাক টাইমটা ভালোই পাস হবে। এর পরের কথা কারোরই মাথায় থাকে না। মানে ভবিষ্যৎ চিন্তা। এরই মধ্যে অনেকে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে। অসৎ সঙ্গে লোহা ভাসে। কিন্তু যখন বোধের উদয় হয় তখন আসলে সব সময় শেষ। কিছুই করার থাকে না।
আমাদের সবাইকে নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। আশা করি কোন ধর্মেই এমন কিছু করার কথা বলা নেই। আমি কি বুঝাতে চাচ্ছি এটা ইতোমধ্যে সবাই আশা করি বুঝে গেছে :)
মুসলিম হিসেবে ছোট ভাইবোনদের কাছে জিজ্ঞেস করব- তারা তাকদির বলে যে একটা ব্যাপার আছে সেটা জানে কিনা? যদি না জানে তাহলে দুঃখজনক। জেনে থাকলে একটু চিন্তা করতে বলব গভীরভাবে। ইসলাম বিবাহের আগে কোনরূপ সম্পর্ক সমর্থন করে কিনা? তোমাদের বর্তমান চলমান সম্পর্ক ভবিষ্যতে তোমাদের ইচ্ছেয় পরিপূর্ণ হবে- তোমরা এতে কতটুকু শিউর? আল্লাহ্ সবার ভাগ্যে কি হবে তা সব কিছুই জানেন। এবং সবকিছুই পূর্ব নির্ধারিত। আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনসঙ্গী সৎ কি অসৎ হবেন, কে হবেন সব আল্লাহ্ ঠিক করে রেখেছেন। কখন হবে আল্লাহ্ জানেন একমাত্র। আগে হোক পরে হোক সবার সাথে দেখা হবে ইনশাআল্লাহ্। তাহলে এই-যে ‘আমরা আব্বু-আম্মুকে কষ্ট দিতে চাই না এজন্য নিজেই নিজেদেরটা ঠিক করে ফেলেছি’ এর মত ঘটনা করে ফেলেছি- এটাতে কি এটাই প্রমাণ হল না যে- আল্লাহ্র প্রতি আমাদের কোনই আস্থা নাই। আমরা কি এসব সম্পর্কে জড়িয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ সঙ্গীর সাথে অন্যায় করে ফেলছি না? আরও অনেক কিছুই হয়- তা আমি বলছি না। বুঝে নেন সবাই। আমানতের খিয়ানতের মত ব্যাপার। অনেকেই এখন বলবে-
“সব কিছুর মধ্যে ধর্মকে টেনে আনার কোন মানে নাই”।
তাদেরকে বলব-
“অবৈধ কিছু করে ফেলার পর যদি বিবেক বলে কিছু থেকে থাকে, অনুশোচনা হবে, ঠিক? তখন তো ঠিকই আল্লাহ্ আল্লাহ্ করবা, তওবা করবা, ধর্মকর্ম শুরু করবা”
অনেকে দেখি ধর্মকর্মও করে, আবার এসবও চালায় যায়। দুই নৌকায় পা রেখে শেষ পর্যন্ত- আমও যায়, ছালাও যায়। আসলে এরা সবাই ভণ্ড।
আসলে আমরা সবাই কমবেশি ভন্ড। মাঝেমাঝে নিজের সাথেও ভন্ডামির চেষ্টা করি।
তবে একজনের কাছে ভন্ডামি করা যায় না ... সেটাই ভয়, আশা, ভালোবাসা - সবকিছুর কেন্দ্র ।
আজ তুমি যখন ভালোবাসার জন্য আহাজারি করছো। ডানে-বামে তাকিয়ে দেখো কেউ খাবারের জন্য কাঁদছে, মরেও যাচ্ছ। আবার অসুস্থতায় ও চিকিৎসাহীনতায় মারা যাচ্ছে।
অনেক কথা লিখে ফেললাম,আজ আর নয়। চিন্তা কর। কোন পথে যাচ্ছে তোমার জীবনটা। সবার দেখাদেখি নিজেকে গড্ডালিকা প্রবাহে ভাসিয়ে দিও না।
এক পরিচিত বড় ভাই বলেছিলেন-
আমরা জানি, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা সমস্ত দোয়া কবুল করেন এবং দোয়ায় ভাগ্য ফিরায়। তাইতো এই ভয়ংকর সময়েও আমরা স্বপ্ন দেখি সুন্দরের, প্রশান্ত আত্মার। এই স্বপ্ন কোন ক্ষুদ্র স্বপ্ন নয়-- স্বপ্নের সুতোর এই প্রান্তে মালা গাঁথছি যখন, অন্য প্রান্তেও তখন আমাদের হয়ে মালা গেঁথে যাচ্ছে জান্নাতে, যেখানে শান্তিই শান্তি। আমাদের কাজই তো তৈরি করে দেয় আমাদের ভবিষ্যত, যে ভবিষ্যত অনন্ত কালের। যা সুন্দর কর্মের মানুষদের জন্য অনন্ত সুন্দর, অনন্ত শান্তির, সুখস্বপ্নের!
তাই আসুন নিজে সুন্দর থাকি, আশপাশটাকে সুন্দর রাখি। আর একটু গভীরভাবে চিন্তা করি। আল্লাহ্ যেন আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করেন- এই দু’আই করি। আমিন।
বি.দ্রঃ একান্ত নিজস্ব অভিমত। আমার মত যারা চিন্তা করেন তারাও এব্যাপারে একমত হবেন বলে আশা করি। আরও অনেক কথা বলার ছিল, মনে নাই, লিখতে পারি নাই। অনুজদের প্রতি লিখলাম। আসলেই এটা গভীরভাবে চিন্তার বিষয়, কেননা সময় গেলে সাধন হবে না। সবাইকে লিখাটা ধৈর্যসহকারে পড়ার জন্য জানাই অনেক ধন্যবাদ।
জাযাকাল্লাহ খাইরান।
মোঃ আদিব ইবনে ইউসুফ
১৯ অগাস্ট, ২০১৩
ফেসবুক নোটস লিঙ্ক
No comments:
Post a Comment