আমি আমার এই ছোট্ট জীবনে আশেপাশে অনেককেই নিজ সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে অনেক কাজে ব্যস্ত হতে দেখেছি। দুনিয়ার ছোট একটা কাজের জন্য গর্ব করতে দেখেছি। সাফল্য লাভের পর হিংসা করতে দেখেছি। মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করার পরও তাদের এই বিপথে চলে যাওয়া আমাকে অবাক করত। তারা রীতিমত অস্বীকার করে বসত অস্তিত্ব। আবার কেউ কেউ স্বীকার করলেও মানতে চাইত না। ধর্মটাকে ১৪০০ বছরের পুরনো মনে করত। করত বলতে এখনো অনেকেই করে। নাম বলছি না আমি তাদের। বলতে চাইও না। ওদের মূর্খতা আমাকে ব্যথিত করে। হায়!
"হাতের কাছে এই তো মানিক
সামনে এসে দাঁড়ায় খানিক
আবার অন্যদিকে যায় চলে সে মুখটি ফিরাইয়া"
হাতের কাছেই আছে পথের দিশা আল-কুর'আন। তার পরেও তারা ফিরেও তাকায় না। আলহামদুলিল্লাহ্। কোন এক অজানা কারনে আল্লাহ্ আমাকে এসব থেকে মুক্ত রেখেছেন। জীবনে যত বড় বড় সাফল্য আমার তা একমাত্র আল্লাহর জন্যই হয়েছে। আজ এতদুর পর্যন্ত যে আসতে পেরেছি তার জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি সর্বদাই। কিন্তু আমার আশপাশের মানুষেরা একের পর এক সাফল্য পেয়েই চলেছিল/চলেছে তাদের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নাই। দম্ভ ভরে তারা ক্রেডিটটুকু নিজের বলেই দাবি করে বসে।
আলহামদুলিল্লাহ্। এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করে ছোটবেলা থেকেই ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। তারপরেও কখনো কখনো বিপথে চলে গিয়েছিলাম অসৎ সঙ্গে পরে। প্রতিবারই আমার জন্য ত্রাণকর্তা হিসেবে কেউ না কেউ আবির্ভূত হয়েছেন বন্ধুরুপে। এটা একটা মিরাকল আমার জন্য। এই ছোট্ট জীবনে আমিও বার বার ভুল করেছি উঁচু আকাঙ্ক্ষায় ডুবেছি। ব্যর্থ হয়েছি। জীবনের মোড় ঘুরে গেছে। কিছু মানুষকে এক্সপেক্ট করতাম খুব তাদের পাইনি। হতাশ হয়েছি। আল্লাহ্ আমায় রক্ষা করেছেন। বন্ধুরা পরিবর্তন দেখে অবাক হয়েছে। তারা বারবার চেয়েছে আমি যেন তাদের পথে চলি। ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠেছে তখন- আজ যার কথা শুনছি, উঠছি বসছি আল্লাহর কথা বাদ দিয়ে। তারাই আগামীকাল আমি যখন এই ধরাধাম ছেড়ে চলে যাব তখন আমার এই দেহ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। হয়তোবা ইহকালে আপনারা ছিলেন কাছাকাছি সম্পর্কের কিন্তু মারা যাবার পর এই লাশটাকে সহ্য হবে না কিভাবে অতি তাড়াতাড়ি তাকে কবরস্থ করা যায় তার জন্য তারা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়বে। একটু চিন্তা কর- আমি/আমরা কার কথা বাদ দিয়েছিলাম। এক আল্লাহর, যিনি আমার ইহকালেও আছেন পাশে, পরকালেও থাকবেন পাশে- তিনি আমার সৃষ্টিকর্তা। আর আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টির কথা ভুলে গিয়ে আমাদের মতই এক ইনসানের সন্তুষ্টিতে ব্যস্ত আজ। নিশ্চয়ই আমরা ক্ষতিগ্রস্থ। চিন্তা কর গভীরভাবে চিন্তা কর।
বন্ধুরা যখন দুনিয়ার লেখাপড়ায় ব্যস্ত ছিল, গল্প-গুজবে ব্যস্ত ছিল, তখন আমি প্রায়ই নির্জনে কাটিয়েছি সময়। সবাইকে ছেড়ে একটু একা হয়ে গিয়েছি। কার কার কাছে আমাকে আনস্যোসাল, হতাশ লেগেছিল তখন। কেউ কেউ আমার এই পরিবর্তন পছন্দ করছিল না। দু’টা বছর অন্ধকারে থেকে হঠাৎ আলোর সন্ধান পেয়ে বসা এই আমি তখন একের পর এক জ্ঞান সন্ধান করে চলছি। চলার পথে পড়েছি নাম ভুলে যাওয়া অনেক বই। ছোটবেলা থেকে নতুন বই পড়ার প্রতি এক দুর্বার আকর্ষণ ছিল আমার। পদে পদে ধাক্কা খেয়েছি। হায়! আমি কি করেছি!! আমরা কি করছি!!! মনে প্রাণে চাইলাম আশেপাশের লোকজনদের আমার এই জ্ঞান ছড়িয়ে দিব। অবজ্ঞা পেয়েছি। হুমকি পেয়েছি। আবার ভালোবাসা পেয়েছি। শ্রদ্ধা পেয়েছি। সবই আল্লাহ্র ইচ্ছা। আল্লাহু আলেম।
সবসময় পাশে ছিল/আছে আল-কুর’আন। তারপর রাসুলের সুন্নাহ হাদিস। সহীহ হাদিস সমূহ। রিয়াদুস সালেহিন। এবং কিছু খুব ভালো বই। আমার জ্ঞান এই পর্যন্তই। অনেকেই বলেন আমি কোন ইসলামিক লাইনে লেখাপড়া করি নাই, তাই আমার দাওয়াহ এর কাজ চালিয়ে যেতে সমস্যা আছে। গভীরভাবে খেয়াল করলাম, তারা বলেন আমিও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উম্মাত। তারপরেও তাদের সাথে কেন আমার এত অমিল। একটা জায়গায় তারা আটকে যান কুর’আনের আয়াতে। তারা বাপদাদার ধর্মকে বড় ধর্ম হিসেবে মেনে নিয়েছেন। ইমোশনালী তারা কমপ্রোমাইজড। কুর’আনে আল্লাহ্ তাদের সম্পর্কে বলেছেন সেই ১৪০০ বছর আগেই। কি আশ্চর্য!! আমাদের বর্তমান অবস্থার কথা আল্লাহ্ কত সুন্দর করেই না বর্ণনা করেছেন আল-কুর’আনে, আর সেই কুর’আনকে, ইসলাম ধর্মকে ১৪০০ বছরের ব্যাকডেটেট বলে!!
তারা বললঃ না, তবে আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি, তারা এরূপই করত। [26:74]
আল-কুর’আনে সূরা কাহফ, সূরা আসর, সূরা ইয়াসিন আর সূরা আর-রাহমান আমার খুব প্রিয় চারটি সূরা। আমাদের মধ্যে অনেকে মুসলিম আছে নামে কিন্তু কাজেকর্মে মিল নাই। নামকরণের সার্থকতা নেই বললেই চলে। তাদের আমি একটা সাজেশন দিব। পুরো কুর’আন আপনারা পড়তে চাইবেন না আমি জানি। সেই ধৈর্য আপনাদের নাই আমি জানি। শুধু সূরা আর-রাহমান পড়ুন। দেখুন।
فَبِأَيِّ آلَاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ
অতএব, তোমরা উভয়ে তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?
এই আয়াতটুকু বারবার এসেছে সূরা আর-রাহমানে। পুরো সূরা পড়ুন অবশ্যই বাংলা অনুবাদ পাশে রেখে। বারবার উপরের এই আয়াতটুকু আসবে। আপনার ভেতরে যদি কিছু থেকে থাকে আমি ১০০% সিউর কাঁপুনি আসবেই। রিয়ালিজেশন হবে। কি করছেন আপনি!! কি ক্ষতিগ্রস্থই না আপনি!!
আমার জীবনকে বদলে দিয়েছে মাত্র দুইটি সূরা।
১) সূরা আল-আসর, ২) সূরা আর-রাহমান।
আমি বুঝতে পেরেছি। ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠেছে তুমি যা করেছ ভুল করেছ। এবার দয়াময় আল্লাহ্র কাছে সাহায্য চাও। যারা এখনও বুঝেন নি। ইসলামটাকে ব্যাকডেটেট ভাবেন তাদের প্রতি অনুরোধ সূরা রাহমান পড়ে দেখুন। সময় বলে দেবে আপনার পরবর্তী অবস্থা।
অনলাইনে অনেক বড় বড় ভালো ভাইয়া-আপু পেয়েছি, যাদের লিখা পড়ে সর্বদা অনুপ্রাণিত হতাম। আমার হতাশার সময়ে সেগুলো টনিক হিসেবে কাজ করেছে। আমিও ভালো লিখার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছি। নাম অনেক তাদের বলে শেষ করা যাবেনা। অনেকেই বলে অনলাইনে দাওয়াহর কাজ করে লাভ নাই, রিয়েল লাইফে কর। আমার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী বলেন- তুমি যেটাতে ভালো সেই অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাও। ইনশাআল্লাহ্ সফলকাম হবে। হ্যাঁ আমি জানি আমি কি। চার বছর ধরে অনলাইনে আছি, অনেক মানুষের সাথে মিশেছি, কথা বলেছি। সাইকোলজি বুঝি। অডিয়েন্স প্রেশার বুঝি। আমি জানি কোথায় কোন ক্ষেত্রে আমি ভালো করব। মাঝে মাঝে নিরুপায় লাগে তারপরেও, লোকজনের মূর্খতা দেখে। তারা অন্ধের মত ফলো করে তাদের বাপ-দাদার ধর্মকে। ভুল জেনে বসে আছে, সত্য জানার পরেও তা মানতে চায় না। আমি আমার কাজ করে যাই। আমি জানি আল্লাহ্র কাছে আমাকেও জবাবদিহি করতে হবে। তাদের না জানালে আমাকে ধরবেন আল্লাহ্। কেন তাদের জানাইনাই? জানানোর পরও যদি তারা অবজ্ঞা করে আমার করার কিছুই নাই। কুর’আনে আল্লাহ্ তা’আলা বলেছেন—
অতএব, আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন এবং বলুন, ‘সালাম’।
তারা শীঘ্রই জানতে পারবে। (৪৩:৮৯)
সময় শেষ হয়ে আসছে। জীবনযুদ্ধে আর সবার মত আমাকেও ঝাপিয়ে পড়তে আর কিছুদিনের মধ্যেই। অনলাইন দাওয়াহর কাজ সময় পেলেই চালিয়ে যাব। আগের মত রেগুলার হব না এখানে। আরও ইলম অর্জন করার ইচ্ছা আছে আমার, বাস্তব জীবনে কাজ করার ইচ্ছা আছে আমার। হয়তোবা কোনদিন যদি আল্লাহ্ সুযোগ দেন বই লিখে ফেলব আমার অর্জিত জ্ঞান নিয়ে। একটাই লক্ষ্য আমার অর্জিত জ্ঞান ছড়িয়ে দিব সবার মাঝে ইনশাআল্লাহ। আমার জন্য দু'আ করবেন সবাই।
আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের বিবেক বুদ্ধি বিবেচনা করে সৎ ও সঠিক পথে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।
জাযাকাল্লাহ খাইরান।