আজ জুমু'আর খুতবা হতে প্রাপ্ত ইলম
بِسْمِ
اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
শুরু করছি আল্লাহর নামে
যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু
জুরাইজ নামের এক
আবেদ (ইবাদাতকারী) ছিলেন অনেক আগে। সারাদিন আল্লাহ্র ইবাদাত বন্দেগী, সালাত, জিকির-আজগর
করতেন। বাড়ি হতে দূরে ভূমির একটু উপর আস্তানা বানিয়ে সেখানেই থাকতেন। একবার তাঁর
আম্মাজান বিপদে পড়ে ছেলের কাছে ছুটে আসলেন। ডাক দিলেন, 'ইয়া জুরাইজ।' জুরাইজ
তখন সালাত আদায় করছিলেন, সেখানেই দোটানায় পড়ে গেলেন, মনে মনে বললেন- 'ইয়া
আল্লাহ্, আমার আম্মা ডাকছেন, আমি সালাত পড়ব নাকি আম্মার ডাকে সাড়া দিব।' এদিকে আম্মাজান আবারও ডাক দিলেন, 'ইয়া জুরাইজ।' এবারও
জুরাইজ সালাত পড়ছেন, আর চিন্তা করছেন, 'ইয়া আল্লাহ্, আমার
আম্মা ডাকছেন, আমি সালাত পড়ব নাকি আম্মার ডাকে সাড়া
দিব।' এবার আম্মাজান ৩য়বারের মত ডাকলেন, 'ইয়া জুরাইজ।' এবার
আর জুরাইজ সালাত ছাড়লেন না। উপর হতে কোন সাড়া না পেয়ে আম্মাজান অনেক কষ্ট পেলেন আর
জুরাইজকে বদদু'আ দিলেন, 'কালো
মেয়ের দর্শনের পরেই তোর মৃত্যু হবে।' আব্বা-আম্মা
মন থেকে কষ্ট পেলে, সন্তানকে বদদু'আ দিলে তা ফলে যায়।
এদিকে জুরাইজের
আস্তানার কাছে কিছু রাখাল থাকত, মেষ চরাত তারা।
সেখানে এক রাখাল জিনায় লিপ্ত হল এক কালো
মেয়ের সাথে। বাচ্চা হল। রাখালকে বাঁচাতে মেয়েটি তার সমাজকে বলল, এই বাচ্চার বাবা হল জুরাইজ। লোকজন অবাক হয়ে গেল, 'কি ইবাদাতও করে! আবার অবৈধ সম্পর্কও করে!' লোকজন জুরাইজের আস্তানার উপর চড়াও হল। আস্তানা
ভেঙ্গে চুরমার করল। জুরাইজকে লাঞ্ছিত করল। জুরাইজ বলল, 'হে লোকসকল, এ
বাচ্চার মা-কে ডাক।' সে কালো মেয়েটি এবার জুরাইজের সামনে
এল। আর এমনিভাবে যে জুরাইজ নারীর ফিত্নাহ হতে বেঁচে ছিল, সে কালো মেয়েটিকে দেখল। জুরাইজের আম্মাজানের
বদদু'আ ফলে গেল। এবার জুরাইজ জিজ্ঞেস করল, 'হে বাচ্চা, বলতো
তোমার বাবা কে?' ১ বছরের বাচ্চা কথা বলে উঠল, ‘আমার
আব্বা ঐ রাখাল’ এবার লোকজন বুঝতে পারল, জুরাইজ আসলেই আল্লাহ্র প্রিয় বান্দাদের
একজন। তারা জুরাইজের আস্তানা আবার বানিয়ে দিবার প্রতিশ্রুতি দিল।
এখানে লক্ষণীয় যে, জুরাইজ আবেদ ছিলেন, কিন্তু আলেম ছিলেন না। তাই তিনি ইলম কম থাকার কারণে সালাত ছেড়ে দিয়ে মায়ের ডাকে সাড়া দেননাই। অনেক বড় আবেদ হওয়ার পরেও মায়ের বদ দু'আয় নিপতিত হন।
এখানে লক্ষণীয় যে, জুরাইজ আবেদ ছিলেন, কিন্তু আলেম ছিলেন না। তাই তিনি ইলম কম থাকার কারণে সালাত ছেড়ে দিয়ে মায়ের ডাকে সাড়া দেননাই। অনেক বড় আবেদ হওয়ার পরেও মায়ের বদ দু'আয় নিপতিত হন।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) এর হাদিস।
গ্রন্থের নামঃ সহীহ
বুখারী (ইফাঃ)
হাদিস নম্বরঃ [1133]
|
অধ্যায়ঃ ১৯/
তাহাজ্জুদ বা রাতের সালাত
|
শিক্ষা:
আম্মা-আব্বার
মনে কখনোই কষ্ট দেয়া যাবে না। ফরজ সালাত আদায়ের সময় তাঁরা ডাকলে যদি মনে হয় তাঁরা
সত্যই বিপদে পড়েছেন তাহলে সালাত ছেড়ে দিয়ে তাঁদের ডাকে সাড়া দিতে হবে। যদি মনে হয়
তাঁদের আহবান অতটা জরুরী নয়, পরে সাড়া দিলেও চলবে তাহলে সালাত শেষে তাঁদের নিকট
গেলেও হবে।
এক্সট্রা নোট:
এমনিভাবে সালাত আদায়ের সময় যদি কখনো অনুভব করেন আপনার সামনে দিয়ে আপনার জুতোজোড়া
চোর নিয়ে পালাচ্ছে। তাহলে প্রথমবার সুবহান’আল্লাহ বলে উঠেন, এতে চোর বুঝবে যে
ঘটনাটা আপনি বুঝে ফেলেছেন। এতেও কাজ না হলে সালাত ছেড়ে দিয়ে আপনাকে চোর ধরতে হবে। আরেকটি
উদাহরণ দেয়া যায়, সালাত আদায়ের সময় যদি শুনেন কেউ বিপদে পড়েছে সাহায্য চাচ্ছেন,
তাহলে সালাত ছেড়ে আগে তাকে সাহায্য করতে হবে।
২০ জমাদিউস সানি, ১৪৩৬ হিজরি
জুমু'আ বার
১০ এপ্রিল, ২০১৫ খৃস্টাব্দ
Excellent!
ReplyDelete