এস.এস.সি পরীক্ষার পরপরই ভালো ইংরেজি শিক্ষার নিমিত্তে বন্ধুদের সাথে
পাল্লা দিয়ে সাইফুরসে ভর্তি হই। ইংরেজি কতটুকু শিক্ষা হয়েছিল তা বলতে পারি
না, কিন্তু অনেক নতুন নতুন জিনিস শিখে চমকিত হয়েছিলাম। স্কুলে থাকতে
স্যারদের বাসার অলিতেগলিতে কদাচিৎ ছেলে-মেয়েদের একত্রে ঘুরাঘুরি করতে
দেখতাম। বন্ধুরা বলত- উহারা ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কেমন ঘনিষ্ঠ তা কখনোই বুঝে উঠতে
পারি নাই। বয়েজ স্কুলে পড়াটাকে এজন্য কিছুটা দোষারোপ করতাম। তো,
সাইফুরসে এসে এসব জিনিস একটু বেশিই দেখলাম। তারা ক্লাসে এসে ইংরেজি শিক্ষা
তো দুরের কথা, সারাক্ষন একে অপরের সাথে ফুসুর ফাসুর করেন, খুনসুটি করে। এসব
কাণ্ডের দ্বারা তারা জনগণের কাছে একধরনের আকর্ষণীয় বস্তু হিসেবে পরিণত
হয়েছিল।
আগে তারা একজন আরেকজনকে বন্ধু হিসেবে হিসেবে ভাবত জানতাম।
কিন্তু তারা প্রথম ইংরেজিতে অন্যধরনের শব্দ ব্যবহার করে একে অপরকে ডাকা করা
শুরু করে। বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়- বালক বন্ধু, বালিকা বন্ধু। আরে ভাই!
বন্ধুইতো ভালো ছিল আরেকটা শব্দ লাগানোর কি দরকার?!
ক্লাসে এসব হরদম হত। একদিন বিখ্যাত ইয়াসির স্যার (অনেকে উনার নাম শুনে থাকবেন, আমাদের Phonetics পড়াতেন) সব শুনলেন, বললেন-
'তোমরা একটু সাবধানে শব্দগুলো ব্যবহার করিও। একটু অক্সফোর্ড ডিকশনারি দেখলে ভালো হয়।' আমি বরাবরের মতই অতি উৎসাহী, সাথে অক্সফোর্ডের পকেট ডিকশনারি ছিল, চেক করে দেখে ভিম্রি খাইলাম।
অক্সফোর্ড
ডিকশনারিতে girlfriend শব্দের অর্থ হল “a person’s regular female
companion in a romantic and sexual relationship”. Boy friend শব্দের
অর্থও একই শুধু female এর জায়গায় male!! বুঝলাম কেন বলেছেন ইয়াসির স্যার!!
এখন এসব বেশি বেশি। আগে এসব কম ছিল। এখন সবাই করে, সেই সাথে কিছু
দাঁড়িওয়ালা ভাই, হিজাব অনেক বোন যখন এসব শব্দ ব্যবহার করে এবং বাস্তবে
প্রয়োগ করে দেখান, ব্যথা পাই তখনই। আগে এসব দেখার সাথে সাথে আম্মা বলতেন-
বাবা! ওসব দেখ না, ওরা নষ্ট হয়ে গেছে! আম্মার কথা যদি সঠিকই হয় তাহলে- এখন
বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকেই এর সমাধান খুঁজেন। অনেকে বলেন- যা হবার তা
তো হয়েই গেছে এখন আর কি ভেবে কি হবে! অনেকে এত বছরের তিল তিল করে গড়ে তোলা
সম্পর্ক চোখের সামনে নিমিষেই ভেঙ্গে পড়ুক, তা চান না।
Companion, romantic and sexual relationship এর সংজ্ঞায় girlfriend,
boyfriend এর অর্থ বুঝিয়ে দেওয়া সেক্যুলার সমাজ এই সম্পর্কের সহজ সমাধানের
পথে না হাঁটলেও মহান আল্লাহ বলছেন কুরআনে,
“আল্লাহর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে, তিনি তোমাদের (মানব জাতির) মধ্য থেকেই
সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য (বিপরীত লিঙ্গের) জুড়ি, যাতে করে তোমরা
বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো! এ
উদ্দেশ্যে তিনি তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন হৃদ্যতা- বন্ধুতা আর দয়া-
অনুগ্রহ অনুকম্পা। এতে রয়েছে বিপুল নিদর্শন চিন্তাশীল লোকদের জন্য”।
[সূরা আর রুমঃ ২১]
অতঃপর সেই এস.এস.সির পর হতে আজ পর্যন্ত কত কিছু দেখেছি। মাসের পর মাস ঢাকা
শহরে দেশের সবচেয়ে ভালো জায়গায় পড়ে আর নফসের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকা আমি
চাইলেই যে হাজারটা নষ্টামিতে গা ভাসিয়ে দিতে পারি এটা না বোঝা আমার
আশেপাশের অন্ধকারে নিমজ্জিত জগত ঠিকই বুঝে এই বয়সে বিয়ের কথা তোলাও একটা
লজ্জাহীনতা! রীতিমত হাস্যরসের বস্তু এই পবিত্র বিয়ে, তাদের হাসি ঠাট্টা
দেখলেই বুঝি। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ্, আমার পরিবারের কাছে থেকে আগে যেমন
শুনতাম-
"বাবা! ওসব দেখ না, ওরা নষ্ট হয়ে গেছে!" এখনো তেমনি পাই, তাই নিজের বাস্তব জীবনে লালন করে চলেছি তাঁদের অমূল্য শিক্ষা।
“আমার ছেলে কিন্তু আর দশজনের মত না” “আমার মেয়ে কিন্তু আর দশজনের মত না”! এই
“আর দশজনের মত না” তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলা পরিবাররা ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারে না
কিভাবে তাদের মেধাবী সন্তানেরা এই যান্ত্রিক শহরে নৈতিকতা বলি দিয়ে ঘুরে
বেরিয়ে মেধাবী জীবনগুলোই অর্থহীন করে তুলছে। বরঞ্চ আমার পরিবারের গর্বের
সাথে “আমার ছেলে কিন্তু আর দশজনের মত না” বলাটাকে মূল্য দেওয়ার চেষ্টা
করেছি সর্বদা। এবং চেষ্টা করে যাব সামনের দিনগুলোতে ইনশাআল্লাহ।
জাজাকাল্লাহ খাইরান।
ফেইসবুক নোটস লিঙ্ক