শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু
হে মুসলিম! তোমার প্রতি বার্তা………
হে মুসলিম! তোমার প্রতি বার্তা… হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে কারন তোমাদেরকে আমি ভালবাসি।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি ছাড়া ইবাদতযোগ্য কোন ইলাহ নেই, যিনি সব দেখেন, সব শুনেন, সব কিছুর খবর রাখেন, যিনি ফায়সালাকারী, হিসাবগ্রহনকারী, বিনিময়দাতা এবং শ্রেষ্ঠ বিচারক। যিনি নির্দেশ দিয়েছেন-
‘‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় কর, তাঁকে যেমন ভয় করা উচিত এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’’ [১]
আল্লাহ তা'লা আরো বলেন,
‘‘তোমাকে যেমন আদেশ করা হয়েছে (দ্বীনের পথে) অবিচল থাক।’’ [২]
আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন,
‘‘হে ঈমানদারগন! তোমাদের নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবারবর্গকে আগুন থেকে রক্ষা কর যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর।’’ [৩]
মহান আল্লাহ সুবহানাল্লাহু তা'আলা আরো বলেন,
‘‘তোমরা ধাবিত হও সেই পথে (যা নিয়ে যাবে) তোমাদের সৃষ্টিকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের জন্য যা এতই প্রশ্বস্ত যেমন আসমান এবং যমীনের মত, যা মুত্তাক্বীদের জন্য প্রস্ত্তত করে রাখা হয়েছে।’’ [৪]
তিনি আরও বলেছেন-
‘‘ঈমানদার লোকদের জন্য সে সময় কি এখনও আসেনি যে, আল্লাহর যিকরে তাদের অন্তর বিগলিত হবে, তাঁর অবতীর্ন মহাসত্যের সম্মুখে অবনত হবে? তারা যেন সে লোকদের মত না হয় যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল, পরে দীর্ঘকাল তাদের উপর দিয়ে চলে গেলে তাদের অন্তর শক্ত হয়ে গিয়েছে।’’ [৫]
আল্লাহ তা'আলা আরো বলেন,
‘‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নিজেকে বিক্রয় করে থাকে এবং আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি পূর্ন দয়াশীল।’’ [৬]
সালাত এবং সালাম নাবী মুহাম্মদ (সল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের) উপর, যিনি সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে প্রেরিত হয়েছিলেন।
যিনি বলেছেন,
‘‘ইহকাল অবশ্যই সবুজ, মিষ্ট ও আকর্ষণীয়। আল্লাহ তোমাদেরকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি করেছেন, যাতে তিনি দেখে নেন তোমরা কিরূপ কাজ কর। কাজেই তোমরা পৃথিবী সম্পর্কে সতর্ক হও এবং নারীদের থেকে সাবধান থাক। কারণ বানী ঈসরাঈলের প্রথম ফিতনাহ নারীদের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছিল।’’ [৭]
নাবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেছেন,
‘‘প্রত্যেক বান্দাহকে ঐ অবস্থায় পুনর্জীবিত করা হবে, যে অবস্থায় সে মারা গেছে।’’ [৮]
হে মুসলিম, আল্লাহ তোমার প্রতি রহম করুন, আল্লাহর আনুগত্য অনুযায়ী তোমার প্রতি আমার ওয়ালা (দায়িত্ববোধ) রয়েছে, আমি আমার নিজের যেরূপ কল্যাণ চাই, অনুরূপ কল্যাণ তোমরও চাই। আল্লাহর জন্য তোমাকে বলছি-
- আল্লাহর ইবাদত কর এবং ত্বাগুতকে বজর্ন কর। একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ দাও যার কোন শরীক নেই, এ বিষয়ে মানুষকে উৎসাহিত কর, যে মেনে নিবে তার সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন কর এবং যে তা অস্বীকার করবে তাকে কাফের বলে ঘোষনা দাও। শিরককে পরিত্যাগ কর এবং আল্লাহর ইবাদতে শিরকের বিষয়ে ভয় প্রদর্শন কর, এ ব্যাপারে কঠোরতা আরোপ কর, এ নীতির ভিত্তিতে শত্রুতা স্থাপন কর এবং যে ব্যক্তি শিরক করে তাকে কাফির বলে ঘোষনা দাও। এ বিষয়গুলো তোমার প্রতি ওয়াজিব, এই দ্বীনের ভিত্তি ও মৌলনীতির অন্তর্ভূক্ত।
- তুমি তোমার দ্বীনকে, তোমার আক্বীদাকে প্রকাশ কর, প্রচলিত শিরক-কুফর-ত্বাগুতের স্বরূপ উন্মোচন কর, কাফের-মুশরিক-ত্বাগুতের সাথে বারা‘আ তথা সম্পর্কহীনতা, ঘৃনা-বিদ্বেষ-শত্রুতা প্রকাশ করে দাও। এগুলো তোমার প্রতি ওয়াজিব।
- যদি না পার প্রকাশ করতে তাহলে তোমার জন্য ওয়াজিব তুমি হিজরত করে দুনিয়ার এমন জায়গায় চলে যাবে যেখানে তোমার দ্বীনকে প্রকাশ করতে ও যথাযথভাবে পালন করতে পারবে। যদি হিজরত করতে না পার তোমার জন্য আদর্শ হচ্ছে ছাগপাল নিয়ে পালিয়ে যাবে পাহাড়ে তোমার দ্বীন নিয়ে।
- যদি তাও না পার তোমার পরিবার ও তোমার অসামর্থতার কারনে, তাহলে কাফের-মুশরিক-ত্বাগুতের থেকে অবশ্যই দূরে থাকবে, তাদেরকে বন্ধু বানাবে না। সচেষ্ট থাকবে বাঁধা দূর হবার যেন সুযোগ পেলেই চলে যেতে পার।
- তুমি সাবধান হও!! কাফেরদের সাথে আচরন এবং মেলামেশায়, এমন কিছু কাজ আছে যা করলে তুমি এই দ্বীন থেকে খারিজ হয়ে কাফের-মুরতাদে পরিণত হবে, সেগুলো যেমন- কাফেরদের দ্বীনকে ভালবাসা গণতন্ত্রের চর্চা করা, গণতন্ত্রের নির্বাচনে অংশগ্রহন করা, গনতন্ত্রের লোকদের গনতন্ত্রের জন্য ভালবাসা, আইন প্রণয়নকারী সংসদ সদস্যদের ভালবাসা, আধুনিকতাবাদী ও জাতীয়তাবাদীদের ভালবাসা তাদের উদ্দেশ্য এবং বিশ্বাসের কারনে, তাদেরকে ইসলামের উপর বিজয়ী দেখতে আশা করা, মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের সাহায্য করা, তাদের দ্বীনের সাথে আপোষ করা ইত্যাদি।
- তুমি সাবধান হও!! কাফেরদের সাথে আচরন এবং মেলামেশায়, এমন কিছু কাজ আছে যা করলে তোমার ভয়ংকর কবিরাহ গুনাহ হবে, সেগুলো যেমন- কুফফারদের মর্যাদা দেয়া, সম্মান করা, অথবা সমাবেশে অগ্রে স্থান দেয়া, মুসলিমের বদলে তাদেরকে কাজে নিযুক্ত করা, কাফেরদের সাথে নরম নরম কথা বলা, তাদের প্রতি হাসা, তাদের ময়লা পরিষ্কার করে দেয়া ইত্যাদি।
- সাবধান হও কাফিরদের উপর সন্তুষ্ট হইওনা, নির্ভর করো না, সান্নিধ্যের অন্বেষণ করো না,অন্তরঙ্গ বন্ধু বানাইও না, অনুগত হইও না, ভালবেসো না, কর্তৃত্ব দিও না, সহযোগিতা করো না, উপদেশ-পরামর্শ চেয়ো না, কুফরির কোন বিষয়ে একমত পোষণ করো না, প্রশংসা- প্রশস্তি করো না, অভিভাবক বানাইও না এমনকি সে যদি ভাই বা পিতাও হয়। সতর্ক হও তোমার অজান্তে না আবার তোমার দ্বীন ধ্বংস হয়ে যায় কিংবা ভয়কর কবিরাহ গুনাহ হয়ে যায়।
- সাবধান, সতর্কতার (প্রিকোশানের) নামে বেশী বাড়াবাড়ি করছো না তো যা তোমার জন্য জরুরী নয়।
- এই দ্বীনকে প্রচার, প্রসার এবং কায়েমে সচেষ্ট হও, গাফিলতা পরিত্যাগ কর, তোমার অবস্থা যেন বানী ইসরাঈলের মত না হয় যাদের অনেক দিন যাওয়ার পর অন্তর শক্ত হয়ে গিয়েছিল।
- আল্লাহর কালিমাকে উচ্চে তুলে ধরার জিহাদে জান-মাল দিয়ে অংশগ্রহণ কর, তোমার উপর এটি ফারদুল আইন, ঈমান আনার পর সবচেয়ে বড় ওয়াজিব, এই দ্বীনের শীর্ষচুড়া, তোমার সফলতার চুড়ান্ত পথ।
রেফারেন্স:
[১] সূরা আল-ইমরান ৩: ১০২
[২] সূরা হুদ ১১:১১২
[৩] সূরা তাহরীম ৬৬:৬
[৪] সূরা আলে ইমরান ৩:১৩৩
[৫] সূরা আল হাদীদ ৫৭:১৬
[৬] সূরা বাক্বারাহ ২:২০৭
[৭] মুসলিম হাদিস নংঃ২৭৪২
[৮] মুসলিম হাদিস নংঃ ২৮৭৮
[ইন শা আল্লাহ্ চলবে]