Wednesday, May 27, 2020

দাড়ির প্রতি ভালোবাসা

দাড়ির প্রতি ভালোবাসার জন্ম হয়েছিল বহু আগে। তবুও ঈমান অত শক্ত ছিল না বলে রেখে দিতে পারি নাই। একটু রাখি একটু কাটি এই হল অবস্থা। কাটলে কবিরা গুনাহ হবে তা জানতাম তাও গুনাহ বেড়েই যাচ্ছিল (আল্লাহ মাফ করুন)। পারিপার্শ্বিক অবস্থাও অনুকূলে ছিল না। এর পর অনেক বেলা গড়ালো।

নিজেকে প্রশ্ন করলাম, দাড়ি কেন রাখব? উত্তর পেলাম, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন তাই, রাসুলুল্লাহর (ﷺ) সুন্নাহ। কাটতে নিষেধ করেছেন মানে হল ওয়াজিব। ভাবলাম এই দাড়ি ছাড়া যদি মরে যাই, হাশরের ময়দানে যে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের জন্য সুপারিশ করবেন তার কাছে কেমনে যাব? লজ্জা লাগবে তো। মুখে দাড়ি নাই। নিজেকে দাবী করি রাসুলুল্লাহর (ﷺ)উম্মত।

       

নিজের ঈমানের জোর বাড়াতে হবে। এবার শত প্রতিকূলতা আসলেও রেখে দিব বলে মনস্থির করলাম। কাছের মানুষজনদের কাছ থেকেই বাধা আসা শুরু করল, যেটা সহজেই অনুমেয় ছিল। আলেমের পরামর্শ নিলাম। সে মতে তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করি নাই আবার তাদের কথাও শুনি নাই। এভাবে রেখে দিলাম বহু দিনের লালিত স্বপ্ন দাড়ি। কোনো ফ্যাশনেবল না। প্রাকৃতিকভাবে বাড়বে এমন। বন্ধুরা বলা শুরু করল আমার বয়স দশ বছর বেড়ে গেছে। আত্মীয় স্বজনরা বলল কোনো মেয়ে বিয়ে করবেনা। আমি বললাম যে বিয়ে করবে সে এই দাড়ি দেখেই পছন্দ করবে। কেউ বলল ক্ষ্যাত। আমি বললাম, আমার রাসুলুল্লাহর (ﷺ) মুখে দাড়ি ছিল, উনি ছিলেন সবচেয়ে বেশি হ্যান্ডসাম। ঈদের দিন সবাই বাসায় আসত আর অনেকের নানান কথা শুনতাম।

এরকম অনেক তীর্যক বাক্য, মানসিক অত্যাচারের মাঝে সবচেয়ে প্রতিকূলতা ছিল চাকরি ছিল না। বেকার ছিলাম। সবার ধারণা আমার এই অবস্থায় কিছুই হবেনা। আল্লাহর কাছে দু'আ করতাম অনেক। ভাইভা দিতাম। রেফারেন্স নাই। জব মিলেনা। এভাবেই দিন যেতে লাগল। আশেপাশের মানুষের কথাও সত্য হতে লাগল। মাসজিদে যেতে আসতে পিচ্চিরা আগে ভাইয়া ডাকতো, দাড়ি রাখার পর হয়ে গেলাম আন্কেল। পজিটিভ দিক হল সালামের প্রসার হল। সবাই সালাম দেয়। সালাম দিই। নিজের মাঝের অহংকার ভাব চলে যাচ্ছে, সবাইকে সালাম দিচ্ছি।

এর মাঝে আল্লাহ (ﷻ) আমাকে একটা সুযোগ দিলেন। আল্লাহর ঘরে যাব। রাসুলুল্লাহকে (ﷺ) দেখতে যাব। আলহামদুলিল্লাহ। জীবনের সেরা অনুভূতি। সেখানেও দেখলাম কত ভাই ক্লিন শেইভ মুখ নিয়ে আমার রাসুলুল্লাহর (ﷺ) রাওযাতে সালাম পেশ করতে গেছেন। মনটা ব্যথায় ভরে গেল। তাদের জন্য দু'আ রইল যেন তারা দাড়ি রাখতে পারেন। উমরাহ শেষে দেশে ফিরে একটা চাকরি পেয়ে গেলাম পুরো অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে যেখানে আমি এপ্লাইই করি নাই। নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম রিযিকদাতা।

অতীতে অনেক ভাই দাড়ি রাখিনা কেন বলে চাপ দিতেন। আল্লাহু আ'লাম। সবকিছুর একটা সময় আছে। তখন হয়তো আমার ঈমানী বল ছিল না। আমি প্রস্তুত ছিলাম না। এত বছর চেষ্টা করতে করতে সঠিক সময়েই প্রস্তুত হলাম। পরীক্ষা দিলাম। আলহামদুলিল্লাহ।

                     

এই লকডাউনে যারা দাড়ি রেখেছেন তারা দয়া করে কাটবেন না। দাড়িটা রেখে দেন। লোকে কী বলবে এসব না ভেবে আপনি আমার মত করে ভাবতে পারেন যে মানুষ টা আপনার জান্নাত প্রাপ্তির জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে তাঁকে ভালোবেসে কি এই কাজটুকু করতে পারবেন না?

একেকজনের জীবনের পরীক্ষাগুলো অন্যরকম। আপনার হয়তোবা আমার মত অবস্থা হবেনা। হয়তো বউ অভিমান করবে হয়তো মা অভিমান করবে কথা বলবে না কিছুদিন। আপনি লেগে থাকবেন। একসময় সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই চাপাচাপির কিছু নাই। বলছি শুধু মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে দাড়িটা রেখে দেন। কারণ সকল মুসলিম পুরুষের জন্য দাড়ি কাটা কবিরা গুনাহ, মোছ ছোট করা এবং দাড়ি রাখা হল ওয়াজিব।

ওয়ামা তাওফিকি ইল্লাহ বিল্লাহ।